একটি প্রাচীর ঘেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অচলায়তন। এর ভেতরে বাইরের কোনো আলো-বাতাস প্রবেশ করে না। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আচার্য, উপাচার্য, উপাধ্যায়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবাই আছে। এ প্রতিষ্ঠানের পাঠদান পদ্ধতি প্রাচীনকালের এবং নিয়মকানুন অত্যন্ত কঠিন। বিদ্যায়তনটির শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কঠোর শাস্তি পেতে হয়। এখানে শাস্ত্রীয় আচার-আচরণ ও মন্ত্র শেখানো হয়। শিক্ষার্থীরা অর্থ না বুঝেই মন্ত্র মুখস্থ করে, একমাত্র ব্যতিক্রম শিক্ষার্থী পঞ্চক। তার কিছুতেই মন্ত্র মুখস্থ করতে মন বসে না। তার মনে নানা প্রশ্ন, নানা জিজ্ঞাসা, নানা সংশয়, অথচ অচলায়তনের নিয়ম হচ্ছে—এখানকার ব্রত, আচার, মন্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো প্রশ্নজিজ্ঞাসা-সংশয় থাকতে পারবে না। বিনা প্রশ্নে, বিনা জিজ্ঞাসায়, বিনা সংশয়ে সব মেনে নিতে হবে। পঞ্চকের বড় ভাই মহাপঞ্চক অচলায়তনের একজন পণ্ডি, সে ‘অচলায়তনে’র আচার-আচরণ, তন্ত্রমন্ত্র কঠোরভাবে মেনে চলে। ‘অচলায়তনে’র শৃঙ্খলা কেউ ভঙ্গ করলে তাকে কঠোর শাস্তি দেয়। পঞ্চক ও মহাপঞ্চক দুই ভাই হলেও একে অপরের বিপরীত। প্রাচীন নিয়মকানুন-তন্ত্র-মন্ত্রে মহাপঞ্চকের যেখানে গভীর বিশ্বাস, পঞ্চকের সেখানে নানা সংশয়। পঞ্চক সবকিছুকেই পরীক্ষা করে নিতে চায় ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।