‘পড়ো পড়ো পড়ো’ বইটির ফ্ল্যাপের কথাঃ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে জোর-জবরদস্তি করে সরিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেন জেনারেল এরশাদ। লেখক তার ঠিক দুই দিন আগে এসএসসির শেষ লিখিত পরীক্ষা দেন। ১৯৯০ সালের ৩ ডিসেম্বর নিশ্চিত হয় স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিদায়। এর কিছুদিন পরই শেষ হয় লেখকের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন। বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের পুরো সময়টা জুড়ে লেখক নিজেকে সন্ধান করে ফিরেছেন। কখনো মিছিলে, কখনো আকাশ দেখায় কিংবা কখনো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরিতে। সময়টা ছিল বাংলাদেশের জন্য ক্রান্তিকাল। সেই সময়ে বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের বিকাশ শুরু হয়। সেই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় দেশে পুঁজির গঠন। ফলে অনুমতি দেওয়া হয় বেসরকারি ব্যাংকের। আর এর বিকাশের জন্য চালু হয় আইবিএ। এভাবেই আমাদের সমাজে এক নতুন পরিবর্তন সূচিত হয়। এরশাদ আমলের বেশির ভাগ সময় ছাত্রদের কেটেছে রাজপথে, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। আর ঠিক সে সময়ে রাস্তা থেকে রাস্তায়, লাইব্রেরি থেকে লাইব্রেরিতে পড়ার জন্য ঘুরে বেড়াতেন লেখক। কখনো রাতের নাশতার টাকা বাঁচিয়ে, কখনো রিকশার খরচ বাঁচিয়ে নিজের একটা জগৎ বানানোর চেষ্টা করেছেন মুনির হাসান। এ বইটা তার নিজেকে খুঁজে ফেরার প্রথম পর্ব— আত্মানুসন্ধানের কাহিনি।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সফলতার গল্পের সাথে যে ব্যক্তির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তিনি মুনির হাসান। তিনি একইসাথে একজন বিজ্ঞানী, লেখক, ব্লগার ও উদ্যোক্তা, যিনি তারুণ্য ও উদ্যোক্তা এই দুইয়ের মেলবন্ধনে বেকারত্বের বাঁধা ডিঙোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহ জাগানিয়া প্লাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দেবো’ এর সাড়া জাগানো পথচলা ও সাফল্যের পেছনেও রয়েছে এই মানুষটিরই হাত। মুনির হাসানের আরেকটি পরিচয় হলো- তিনি বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (BdOSN) এর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে মুনির হাসান দৈনিক প্রথম আলোর যুব কর্মসূচী সমন্বয়কের কাজে নিয়োজিত আছেন। মুনির হাসানের জন্ম ১৯৬৬ সালের ২৯ জুলাই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেখানেই সেন্ট মেরিজ, মুসলিম হাই স্কুল ও মুসলিম এডুকেশন সোসাইটিতে শেষ করেন হাই স্কুলের পাঠ। বাকি শিক্ষাজীবন জুড়ে আছে চট্টগ্রাম কলেজ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অবদান ও সম্পৃক্ততার জন্য বন্ধু মহলে ‘ম্যাথ মুনির’ নামে পরিচিত হলেও বুয়েটে তাঁর পড়ার বিষয় ছিলো ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। দৈনিক সংবাদের সাপ্তাহিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফিচার পাতায় লেখালেখি করতে গিয়ে সাহচর্য পেয়েছেন আ. মু. জহুরুল হক, আবদুল্লাহ আল-মুতী, শরফুদ্দিন কিংবা এ আর খানের মতো বিজ্ঞান লেখক ও বিজ্ঞান কর্মীদের। তাঁদের অনুপ্রেরণায়ই বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে আরও উদ্যমী হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোর বিজ্ঞান বিষয়ক ফিচার পাতারও করেছেন সম্পাদনা। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০০৩ সালে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের সাহচর্যে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। বর্তমানে সেই সফল কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন মুনির হাসান। তাঁর অসাধারণ সব কাজের সাথে তাল মিলিয়ে, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সময়ে সময়ে বেশ কিছু বইও লিখেছেন মুনির হাসান। মুনির হাসান এর বই সমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শরবতে বাজিমাত, গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং, গল্পে গল্পে ধাঁধা, অঙ্কের ধাঁধা ধাঁধায় অঙ্ক ইত্যাদি। মুনির হাসান এর বই সমূহ এর মধ্যে লেখকের বুয়েটে জীবন নিয়ে লেখা আত্মজৈবনিক বই ‘পড়ো পড়ো পড়ো’ পেয়েছে অসম্ভব পাঠকপ্রিয়তা। তাঁর জীবনেরই মতো মুনির হাসানের বই তাঁর পাঠকদের উদ্দীপিত করে নিজের পছন্দে নিজের জীবন বেছে নিতে ও গড়ে তুলতে।