রবার্ট বয়েলের অনুসন্ধান ও গবেষণার ফলে যখন আলকেমি এবং রসায়নের মধ্যে স্বতন্ত্র পার্থক্য সূচিত হয় তখন থেকেই আধুনিক রসায়নবিজ্ঞানের সূচনা। বিজ্ঞানের একটি পূর্ণাঙ্গ শাখায় পরিণত হয় রসায়ন যখন অ্যান্তনি ল্যাভয়শিয়ে ভরের নিত্যতা সূত্র আবিষ্কার করলেন। এই সূত্র রাসায়নিক ঘটনাবলির সূক্ষ্ম পরিমাপ এবং পরিমাণগত পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করে। তাই যখন আলকেমি এবং রসায়ন কেবল পদার্থের প্রকৃতি ও রূপান্তর সম্পর্কে আলােচনা করত তখন রসায়নবিদগণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়ােগের মাধ্যমে রসায়নের মৌলিক বিষয়বলি উদ্ভাবনের চেষ্টা করতেন। জৈব যৌগে সাধারণত হাইড্রোজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হ্যালােজেন, ফসফরাস, সিলিকন, সালফার ইত্যাদি থাকে। এই জৈব যৌগ সমূহ গাঠনিক দিক থেকে কিছুটা ভিন্ন এবং এদের প্রয়ােগ অত্যন্ত ব্যাপক। অসংখ্য পদার্থের (রঙ, প্লাস্টিক, খাদ্য, বিস্ফোরক, ঔষধ, জ্বালানি ইত্যাদি আরাে অনেক) মূল গঠনকারী উপাদান হলাে জৈব যৌগ। কিছু ব্যতিক্রম বাদে প্রায় সব জৈবিক ক্রিয়ার মৌলিক অংশের গঠনকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান জৈব যৌগ। বিজ্ঞানের অন্য সব শাখার মতাে জৈব রসায়নেও রয়েছে আবিষ্কারের স্বতন্ত্র ধারা। এইসব আবিষ্কার বা নব প্রবর্তনের মূলে রয়েছে বাস্তব, তাত্ত্বিক ও প্রয়ােগিক বিভিন্ন দিক। জৈব রসায়নের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পলিমার বিজ্ঞান, ফার্মাসিটিক্যাল রসায়ন, বস্তুবিজ্ঞান এবং এগ্রিকেমিক্যালের বিভিন্ন শাখায় এর ব্যাপক প্রয়ােগের মাধ্যমে। এই বইয়ের মূল আলােচ্য বিষয় জৈব রসায়নের সেইসব কাহিনি।
সৌমেন সাহা ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে এই জেলাতেই। খুলনার স্বনামধন্য সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও গণিতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই পাড়ি জমান সুদূর ইংল্যান্ডে। সেখানকার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লন্ডন কলেজ অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটিং বিভাগ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমাসহ বি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। সৌমেন সাহা নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, বিশেষত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত লেখার সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। তাঁর পেশাগত জীবনেও তিনি বিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত। খুলনার ঐতিহ্যবাহী প্রাণিক বিজ্ঞানাগার খুলনার কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। জাতীয় বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকল্পের উদ্ভাবনের কারণে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন। পাঠক সমাদৃত সৌমেন সাহা এর বই সমূহ হলো ‘প্রাচীন ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ’, ‘বৈদিক গণিতের পরিচয়’, ‘পাগল করা গণিত’, ‘যন্ত্ররা যেভাবে কাজ করে’, ‘বিজ্ঞানের জানা অজানা কথা’, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ পাঠ’, ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে’ ইত্যাদি। তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু হলো বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। সাধারণ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে রচিত সৌমেন সাহা এর বই সমগ্র খুব সহজ ও সাবলীলভাবে এই জটিল বিষয়গুলো উপস্থাপন করে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে আত্মমগ্ন এই লেখক বর্তমানে ঢাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।