"কর্নেল সমগ্র ২" বইয়ের পিছনের কভারের লেখা: বাংলা রহস্যকাহিনীতে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার এক অসামান্য সংযােজন। সান্টা ক্লাসের মতাে সাদা দাড়িগোঁফ, টকিটাকা টুপি, পিঠের কিটব্যাগ থেকে উঁকি দেয় প্রজাপতিধরা নেটস্টির্ক, গলায় ঝুলন্ত বাইনােকুলার এবং ক্যামেরা, বিশালদেহী এই বৃদ্ধ, অথচ যুবকের মতাে শক্তিমান মানুষটিকে সহসা দেখলে বিদেশি ট্যুরিস্ট বলে ভুল হতে পারে। কিন্তু তিনি বাঙালি এবং সদালাপী সজ্জন ব্যক্তি। বিরল প্রজাতির পাখি, প্রজাপতি, ক্যাকটাস, অর্কিড়ের সন্ধানে তিনি দুর্গম পাহাড় , জঙ্গল ও ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ঘুরে বেড়ান। তবে তার সেরা বার্তিক রহস্যভেদ। কোনও রহস্যময় হত্যাকাণ্ড কিংবা জঘন্য অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে গেলে অথবা তার কোনও আভাস পেলেই তিনি সেখানে ছুটে যান। অবলীলাক্রমে জটিল রহস্যের জট ভাঁজে ভাঁজে উন্মােচন করেন। তরুণ সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরি, তদুপরি প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে কে হালদার ওরফে হালদারমশাই যখনই কর্নেলের অ্যাপার্টমেন্টে হাজির হন, তখনই পাঠককে মেরুদণ্ড সােজা রেখে বসতে হয়। কারণ এবার এক ভয়াল-জটিল রহস্যের সূত্রপাত অনিবার্য। বাংলা কথাসাহিত্যে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু রহস্যকাহিনী নির্মাণেও যে তিনি কত দক্ষ, তার প্রমাণ তারই সৃষ্টি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। কর্নেলের প্রতিটি ক্রিয়াকলাপ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠককে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখে।
Syed Mustafa Siraj ( জন্ম : ১৪ অক্টোবর, ১৯৩০ - মৃত্যু: ৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ ) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। 'কর্নেল' তাঁর সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ মুর্শিদাবাদ খোশবাসপুর গ্রামে ১৯৩০ সালে অক্টোবর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে বাড়ি থেকে পলাতক কিশোরের জীবন অতিবাহিত করেছেন। রাঢ় বাংলার লোকনাট্য "আলকাপের" সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাচ-গান-অভিনয়ে অংশ নিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরেছেন৷ তিনি ছিলেন 'আলকাপ' দলের "ওস্তাদ" (গুরু)। নাচ-গানের প্রশিক্ষক। কলকাতায় বাস করলেও নিজেকে কলকাতায় প্রবাসী ভাবতেই ভালোবাসতেন। সুযোগ পেলেই বার বার মুর্শিদাবাদের গ্রামে পালিয়ে যেতেন। সেই পলাতক কিশোর তাঁর চরিত্রের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। তাঁর পিতার সঙ্গে বর্ধমানের কর্ড লাইনে নবগ্রাম রেল স্টেশনের কাছে কিছুদিন ছিলেন। সেখানে গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। সেই নবগ্রাম গোপালপুরের প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছিলেন 'প্রেমের প্রথম পাঠ' উপন্যাস। তাঁর লেখকজীবনের প্রথম দিকের উপন্যাস। গোপালপুর থেকে পাশ করে তিনি ভর্তি হন বহরমপুর কলেজে। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখক সত্তায় জড়িয়ে ছিল রাঢ়ের রুক্ষ মাটি। মুর্শিদাবাদের পাশের জেলা বীরভূম। যেখানে লাভপুর গ্রামে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। একই জলহাওয়া তাঁদের দুজনকেই প্রাণোন্মাদনা দিয়েছিল। তাই তারাশঙ্কর বলতেন, "আমার পরেই সিরাজ, সিরাজই আমার পরে অধিষ্ঠান করবে।" সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের 'অলীক মানুষ' উপন্যাসটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্কিম পুরস্কার - এসব ছাড়াও ভুয়ালকা পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত। তাঁর 'অমর্ত্য প্রেমকথা' বইয়ের জন্য জন্য তিনি পেয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত নরসিংহদাস স্মৃতিপুরস্কার। এছাড়া ১৯৭৯ সালে পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার । পেয়েছেন বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার,সুশীলা দেবী বিড়লা স্মৃতি পুরস্কার, দিল্লির OUF সংস্থার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুরস্কার, শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি আরও অনেক পুরস্কার তিনি তাঁর সামগ্রিক সাহিত্য-কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন। তাঁর অনেক কাহিনী চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে, যেমন 'কামনার সুখ দুঃখ' উপন্যাস অবলম্বনে 'শঙ্খবিষ"। দীনেন গুপ্তের পরিচালনায় 'নিশিমৃগয়া'। উত্তমকুমার অভিনীত 'আনন্দমেলা'। অঞ্জন দাশ পরিচালনা করেছেন সিরাজের ছোটগল্প 'রানীরঘাটের বৃত্তান্ত' অবলম্বনে 'ফালতু'। সিরাজের "মানুষ ভূত" কাহিনী চলচ্চিত্র ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে মঞ্চে ক্রমাগত অভিনীত হয়ে চলেছে। এই স্কুল পালানো মানুষটিই পেয়েছিলেন সাম্মানিক ডক্টরেট উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।