"বিষাদনদী" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ‘হরিষে বিষাদ' বলে একটা কথা আছে বাংলায়। যার মানে আনন্দপূর্ণ ঘটনার হঠাৎ বেদনাদায়ক পরিণতি। বিষাদনদী আখ্যানের বিষয় এমন হলেও, এই কাহিনির রহস্য অন্যখানে। বিষাদ মানবজীবনের অনিবার্য অনুষঙ্গ। আমরা জীবনের নানা পর্বে বিভিন্নভাবে বিষাদগ্রস্ত হই; একে মােকাবিলা করে এগিয়ে যাই। সমস্যা হয় তখনই যখন এর পরিণতিতে আমরা স্থায়ী বিষন্নতা কিংবা অবসাদে আক্রান্ত হই। এবং এর ফলে জীবনের প্রবাহ বা কর্মচঞ্চলতা বাধাগ্রস্ত হয়। কথাসাহিত্যিক মােহিত কামাল মানবমনের জটিল অলিগলি নিয়ে যে বিপুল সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন, এই উপন্যাস তার একটি নতুন সংযােজন। বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র ঊর্মি জীবনের প্রথম প্রেমেই প্রতারিত হয়। পরিণতিতে গভীর বিষাদে আক্রান্ত হয়। কিন্তু যে অসাধারণ সৃজন-উচ্ছাস নিয়ে সে একে সৃষ্টিশীলতায় রূপান্তর। করে এবং ভুল পথ ও ফাদ-পাতা ভুবনের কানাগলিতে আটকে গিয়ে ইতিবাচক শক্তিতে পরিণত করে- তারই অনবদ্য প্রকাশ এই উপন্যাস। মােহিত কামাল গল্পচ্ছলে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন। মনস্তত্ত্বের অনেক জটিল-নতুন তত্ত্ব, জীবন জয়ের মন্ত্র আর বিরূপ বিশ্বে একজন নারী কীভাবে সব বাধা-অপবাদ পেরিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তার চমৎকার বিবরণ। সঙ্গে আছে তাঁর কাব্যিক ভাষা। ফলে এ বই হয়ে ওঠে জীবনের বিষাদের নদী পেরিয়ে আনন্দ-গন্তব্যে পৌঁছানাের এক সাহিত্যিক হাতিয়ার।
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।