''কথাশিল্পী মোহিত কামালের ভিন্ন রকম উপন্যাস ‘মন’। সাহিত্যের শব্দ গাঁথুনিতে তিনি ব্যবহার করেছেন মনস্তাত্ত্বিক উপাদান। মনোবিজ্ঞানের কলকব্জায় চড়ে উপন্যাসের জীবনধারা বিস্তৃত হয়েছে, মনের সাহিত্য রচিত হয়েছে। ভালোবাসায় পূর্ণ জীবনে ফাটল তৈরি হয়। বদলে যায় মনের গতি-প্রকৃতি। বিপর্যয় নেমে আসে, সুখি পরিবারের ভিত ভেঙে যেতে থাকে। ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং ক্রোধের আগুনে পুড়তে থাকে মন । পুড়তে থাকে দেহ । ধসে যায় সামাজিক সমৃদ্ধি । সাম্প্রতিক সামাজিক সমস্যা চিত্রণের আলোকে মোহিত কামাল তুলে ধরেছেন জীবন যন্ত্রণার গোপন হাহাকার। ভালোবাসার গোপন শক্তিকে তিনি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সমাজ সংস্কারের জন্য নৈতিকতা ব্যবহার করেছেন বিশ্লেষণের ভেতর দিয়ে । উপন্যাসের শব্দ বিন্যাসের ধাপে ধাপে মনোথেরাপির বিষয়-আশয় ব্যবহার করে চরিত্রগুলোর ভেতরগত শুদ্ধির পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। পাঠকের সামনে উন্মোচিত হবে সামাজিক নগদগে ঘা নিরাময়ের কৌশল। সাম্প্রতিক জীবন ধারায় মোবাইল ফোনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সমাজের নারী পুরুষের মধ্যে গেড়ে বসতে চলেছে মারাত্মক ধরনের ক্ষত। মোবাইল শব্দ তরঙ্গ হানা দেয় নারী পুরুষের শয়ন কক্ষে। আলোড়িত হয় মন। আলোড়িত হয় দেহ, যৌনতার গোপন কক্ষে ঢল নামে । গড়ে উঠে পরকীয়া, সর্বনাশ হয়ে যায় পারিবারিক আবহ। অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় সন্তানের ভবিষ্যৎ। মা-বাবার অনৈতিক স্খলনের কারণে সন্তানের ব্যক্তিত্বের কাঠামোয় গেঁড়ে বসে নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য । অনিয়ন্ত্রিত হয় আচরণ ও মেজাজ । বেড়ে যায় তাদের মাদকাসক্তির ঝুঁকি ।" এসব নিয়ে এ উপন্যাস।
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।