‘মনীষীরা বলেন’ একটি ভিন্ন ধারার কাব্যছন্দের বই। এ বইটির লেখক আ.শ.ম. বাবর আলী। অর্ধ শতাধিক বইয়ের বেশি বই ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে তার। সাতক্ষীরার নলতা গ্রামে জন্ম নেওয়া এ গুনী লেখক দীর্ঘদিন অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে একটা সময় ইসলামি সাহিত্য চর্চার প্রচলন ছিল। যদিও এখন এ চর্চা যৎসামন্য চোখে পড়ে। এর বহুবিধ কারণন রয়েছে। সে বিষয়ে না গিয়ে আমরা বরং প্রথমেই আ.শ.ম. বাবর আলীর কিছু ছন্দবদ্ধ মনীষীদের বাণী পাঠ করে নিতে পারি। যেমন প্রথমেই তিনি বিশ্ব নবীর বাণীকে ছন্দবদ্ধভাবে প্রকাশ করেছেন এভাবে- চার জীবদ্দশায় পিতা-মাতার সেবা যেজন করে, আল্লাহ তা’লার সন্তুষ্টি সেই সন্তান তরে। পাঁচ মৃত পিতা-মাতার কল্যাণেতে যেজন দোয়া মাগে, নেকবান্দার মধ্যে রাখেন আল্লাহ মাবুদ তাকে। বিশ্বনবী (স.)/পৃষ্ঠা-৭ এক এই ধরণীর মাঝে আছে যত বৃক্ষদল, একই পানির খাদ্য খেয়েও ফলায় ভিন্ন ফল। তেমনিতর সকল মানুষ এই ধরণীর ‘পরে, এক আল্লাহর সৃষ্টি হয়েও ভিন্ন জীবন গড়ে। চার অন্যকে যে দেয় উপদেশ নিজে নাহি মানে, ঘৃণা করো সেই জনেরে ঘৃণাভরা প্রাণে। কথায় এবং কর্মে যাহার স্বতন্ত্রতা নাই, সেই ব্যক্তির সৎ উপদেশ মান্য করো ভাই। হজরত আলী (রা.)/পৃষ্ঠা-১৩ বইটিতে সূচিবদ্ধ আরও অনেক মনীষীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- হযরত ফাতেমা তুজ-জোহরা, হযরত আবুবকর (রা.), হজরত আলী (রা.), খালিদ বিন্ ওয়ালিদসহ অসংখ্য ইসলামী ভাবধারার কবি, দার্শনিক, ভাষাবিদদের মহামূল্যবান বাণী রয়েছে। ৬৪ পৃষ্ঠার এ বইটিতে ৩৯ জন মনীষীর বাণী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বইটি সবশেষে যে মনীষীর বাণী রয়েছে তিনি হলেন- ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তার কয়েকটি বাণী- এক ধর্মের বাণী আবৃত্তি করে, না বুঝে অর্থ তার, তারচেয়ে ভালো নাস্তিকতা ভণ্ডামী যার সার। চার ইসলাম ধর্ম চিরদিনের চির নতুন সেই, শুদ্ধতম এমনটি পথ আর কিছুতো নেই। ধর্মে বিশ্বাস থাকুক কিংবা নাই থাকুক এ বইটি যে জ্ঞানের কথা, প্রজ্ঞার কথা রয়েছে তা একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে অনেটাই সহায়তা করবে। ধর্মপ্রাণ মুসলিম মাত্রই শান্তি ও জ্ঞানের চর্চাকারী। অনেক বইয়ের ভিড়ে এ বইটি পড়ে আপনি পেতে পারেন আলোর সন্ধান।
আ. শ. ম. বাবর আলী জন্ম সাতক্ষীরা জেলার নলতা গ্রামে ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর। ১৯৫৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন নলতা হাইস্কুল থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ. পাস করেন ১৯৬৫ সালে। ১৯৬৮ সালে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. এড. পাস করেন। পরবর্তীতে বিসিএস। একটা বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে তাঁর চাকরি জীবন শুরু হয়। পরে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ২০০০ সালে চাকুরি থেকে পুরোপুরি অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে মওলানা আকরাম খাঁ সম্পাদিত দৈনিক আজাদের মুকুলের মাহফিলে। পরবর্তীতে ইত্তেফাক, সংবাদ, পূর্বদেশ, সওগাত, মোহাম্মদী, সমকাল, মাহে-নও, ঝিনুক, সাতরঙ প্রভৃতি দৈনিক ও মাসিক পত্রিকাতে তাঁর লেখা প্রবন্ধ, গল্প, ছড়া, কবিতা ইত্যাদি নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। অনেকগুলো সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মাননা তিনি পেয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম- সুমন সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), সাহিত্যে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, ক্যাম্ব্রিজ, লন্ডন (১৯৯২), শিরি শিশুসাহিত্য সম্মাননা (১৯৯৩), কালিগঞ্জ সাহিত্য একাডেমি স্বর্ণপদক (১৯৯৯), কবি জসীম উদ্দীন পুরস্কার (১৪০৭ বঙ্গাব্দ), দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ স্মারক প্রতিবিম্ব পুরস্কার (২০০১), সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমি স্বর্ণপদক পুরস্কার (২০০২), বাঁধনহারা লিটলম্যাগ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), অগ্রদূত সাহিত্য সম্মাননা (২০০৭),