সকল প্রাপ্তির ভিড়েও কানে কানে কে যেন প্রতিনিয়ত বলে যায়—‘মানুষ এমনই। একবার পেলে তার কাছে নিতান্তই মাটির মনে হয় সােনার মােহর। তার সাথে অজানিতে আমাদের কণ্ঠ একাকার হয়ে যায়। কাকে যেন সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাত্রি জিজ্ঞেস করতে থাকি—সে ক্যান দুঃখ দ্যায়? উত্তর পাই না। হয়তাে উত্তর প্রত্যাশাও করি না। আমরা বরং উত্তরের অধিক গুরুত্বে জীবনভর বয়ে নিয়ে চলি এই গৃঢ়-সরল প্রশ্ন। চলতে চলতে সামনে দেখি ধু-ধু জলেশ্বরী। সেখানে করিমন বেওয়া ঘুমােবার জায়গা পাচ্ছে না এবং তার সাথে সাথে গােটা উত্তর বাংলা, পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ বাংলা এবং শেষপর্যন্ত গােটা বাংলাদেশই অনিদ্র, কারণ ভূমিহীন করিমন বেওয়াই বাংলাদেশ। আবার বাংলাদেশই করিমন বেওয়া। আর দূর আকাশে সবাই যখন নক্ষত্রবিলাসে ব্যস্ত তখন আমরা নীলিমা জুড়ে মঞ্চস্থ হতে দেখি গাধাজোছনার পূর্বাপর । কারণ জলেশ্বরীবাস আমাদের এই অভিজ্ঞান দিয়েছে যে দুনিয়াব্যাপী গাধাকুলের রাজত্ব থাকলে জোছনাতেও তার দাগ পড়ে। তারপর অজস্র দেয়ালের দেশ পেরিয়ে দেখি খেলারামকে খেলতে বলে প্রকারান্তরে সে আমাদের তথাকথিত রুচির নাবালক কোষগুলাে গুড়িয়ে দেয়। নিষিদ্ধ লােবানের ঘ্রাণে উন্মাতাল আমরা বৃষ্টি ও বিদ্রোহের সমার্থকতা উপলব্ধি করি। রক্ত ও জলের যুগলবন্দি এই চুরাশির জাতককে নিক্ষেপ করে অশেষ একাত্তরে। সেই কবে সে মন্ত্র শুনিয়েছিল—‘ভাষাই আপন করে আবার সেই ভাষা করে পর। শুধু মন্ত্র পড়িয়েই ক্ষান্তি দেয়নি সে। ভাষার গােলকধাধা তাে সে-ই ফাস করে মার্জিনের টুকরােটাকরা মন্তব্যে। সামান্য কথায় শিল্পের চোরাপথে পৌছবার সংকেত রেখে যায় আমাদের জন্য। খল সময় যখন বিচ্ছিন্নতার ইন্ধন জোগায় তখন সে আমাদের জানান দেয়—‘মানুষ আসতেছে। বানের লাহান মানুষ আসতেছে।' যূথবদ্ধ স্বপ্নেরা আসছে। তাদের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় রঙবেরঙের দালালের আলখেল্লায়, তখন সে নূরলদীনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
জন্ম : ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ প্রয়াণ : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ পুরস্কার : আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নাসরিউদ্দনি র্স্বণপদক, জেবেন্নুসা-মাহবুবউল্লাহ্ র্স্বণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, পদাবলী পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।