"ঢাকার ইতিহাস -১ম খণ্ড" বইটির ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ পুস্তকটির নাম সেকালে দেয়া হয়েছিল ঢাকার ইতিহাস। ঢাকা নামটির সাথে একাধারে জড়িয়ে আছে দুটি পরিচিতি। প্রথমত, একটি শহর এবং দ্বিতীয়ত, সে শহরটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এমন একটি রাজনৈতিক/প্রশাসনিক অঞ্চল, যেটির পরিসীমা যুগে যুগে বিবর্তিত হওয়া অব্যাহত ছিল। কেবল একটি বিষয়ে বিশেষ কোনাে পরিবর্তন ঘটেনি; সেটি হলাে শহর-ঢাকার অবস্থান। তবে শহরের পরিসীমাটি পরিবর্ধিত হওয়া অব্যাহত রয়েছে আজও। একশ বছর আগে প্রকাশিত এ পুস্তকের তথ্য-উপাত্ত একদিকে যেমন বর্তমানে দুর্লভ তেমনি বিগত বছরগুলােতে আরাে বহু তথ্য-উপাত্তের সন্ধান বেরিয়ে এসেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ কেবল মুন্সিগঞ্জ থেকে পাওয়া কিছু তামার লিপিফলকের (copperplate grants) ভাষ্যগুলাের উল্লেখ করা যায়। সেগুলাে থেকে জানা গেছে যে, বরেন্দ্রী/বরেন্দ্র/বারিন্দ্র-এর জাতক পাটনা (প্রাচীন পাটলিপুত্র : মগধের রাজধানী) থেকে রাজত্বকারী (খ্রি. ৭৫৬-১১৭৫ সাল) পাল বংশীয়দের শাসনামলের একটি অধ্যায়ে (খ্রি.৮০০-১০২৩ সাল) বিক্রমপুর/মুন্সিগঞ্জ থেকে বাংলার পূর্বাংশে রাজত্ব করতাে রােহিতগিরির (অনেকের ধারণা কুমিলার লালমাই) জাতক চন্দ্র নামের একটি বংশ। সে বংশটির শেষ রাজার নাম ছিল গােবিন্দচন্দ্র (খ্রি. ১০০০-১০২৩ সাল)। অপরদিকে, পালদের শাসনামলের শেষদিকে দাক্ষিণাত্যের কর্নাটক থেকে অভিবাসী হয়ে এসে এ দেশে ক্রমশ আধিপত্য বিস্তারকারী সেন রাজবংশীয় রাজা লক্ষণ সেন (খ্রি. ১১৭৯-১২০৬ সাল) পরবর্তী আমলে সুবর্নগ্রাম/ সােনারগাঁ-বিক্রমপুরে (নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ) রাজত্ব করতে দেব (আধুনিক ইতিহাসবেত্তাগণের পরবর্তী দেব বংশ) উপাধিধারী একটি বংশ। সে বংশের রাজাদের যে তালিকাটি সম্প্রতি চিহ্নিত হয়েছে সেটি অনুযায়ী শেষ দু’জন শ্রেষ্ঠ রাজার নাম ছিল দশরথদেব ও বীরধরদেব। লক্ষণীয় যে, ফারসি ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দীন বারানি রচিত তারিখ-ই ফিরােজশাহী’র (খ্রি. ১২৮৩ সাল) বিবরণ থেকে দেখা যায় খ্রি. ১২৮১ সালে সােনারগাঁয়ে রাজত্ব করছিল দনুজ রাও (বিতর্কিত হরিমিশ্রের কুলজিতে উল্লিখিত দনুজমাধব রায়?) নামের এক রাজা।