গল্প বলা বা লেখা কি খুব সহজ কাজ? মোটেই না। বিশেষ করে মৌলিক গল্প লেখা খুবই কঠিন। শুধু কয়েটি চরিত্র দিয়ে দু-একটা সংলাপ দিলেই সেটা গল্প হবে না। গল্প হতে হলে তার অনেকগুলো গুণ থাকতে হবে। আমাদের অধিকাংশ গল্পকারই একটা পরিচিত গল্প কিংবা চিরায়ত গল্পকে একটু আলাদাভাবে উপস্থাপন করেই সেটাকে নিজের গল্প বলে চালিয়ে দেন! ফলে একই গল্প নানাভাবে পাঠ করতে গিয়ে পাঠক বিরক্ত হয়। ‘সন্দেশ’ বইটি একদম একটি মৌলিক গল্পের বই। বিএম বরকতউল্লাহ্ লেখা এই গল্পগুলো একেবারে নতুন। কিশোরদের জন্য লেখা হয়েছে এ বইটিতে ২২টি গল্প। ৮০ পৃষ্ঠার এ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালে। বিএম বরকতউল্লাহ্ বর্তমান সময়ের অন্যতম একজন গল্পকার। সাবলীল ভাষায় লেখা তার ছোটগল্পগুলো পাঠক মনে দাগ কেটে যায়। বিষয়বস্তুর চমৎকারিত্বে গল্পগুলো হয়ে ওঠে বিস্ময়কর। এ বইয়ের একটি চৎমকার গল্প ‘ভূত ঢুকেছে বই মেলাতে’। গল্পটির শুরু হয়েছে এমন করে―‘বইমেলার এক কোণে বসে অঙ্কনশিল্পীরা জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছিল। কে কত বইতে ছবি এঁকেছে এসব নিয়ে কথা বলছিল তারা। আর হো হো কিৎ কিৎ করে হাসছিল। তারা কথার ফাঁকে ঝালমুড়ি ছুড়ে মারছিল মুখে। হঠাৎ হাসি থেমে গেল। মুড়ি চিবানো বন্ধ। তাদের মাথার উপরে গাছ, গাছের ডাল সরিয়ে মাথা বের করে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল জন্তু। জন্তুটি গমগম আওয়াজ করে বলল, তোরা কারা? আমরা অঙ্কনশিল্পী। কীসের ছবি আঁকিস তোরা? ভূত-পেত্নি, পশুপাখি, চান-সুরুজ, লতা-পাতা-গাছ, এই আর কি! তোরা ভূত দেখেছিস? নাহ্। ভূত কি দেখার জিনিসি? তাহলে ভূতের ছবি আঁকিস কীভাবে?’ এমন একটি পরিচিত ঘটনাকে এমনভাবে গল্প বানানো যায় কেউ কি কখনো আগে ভেবেছে? আসলে আমাদের মনে যে ভৌতিক কল্পনা রয়েছে তাই দিয়েই মেলায় ভূরি ভূরি ভূতের গল্পের বই প্রকাশিত হয়। এসব পড়ে শিশু-কিশোরেরা অনেক আনন্দ পায়। বইটিতে রয়েছে―গলাফোলা কোলাব্যাঙ, খুকু যাবে মেঘের বাড়ি, নাচের ইঁদুর, বাবার দেওয়া স্বাধীনতা, অহংকারী গাছ, টুনটুনি ও বিড়ালছানাসহ আরো অনেক মজাদার গল্প। আসলে সন্দেশ যেমন খেতে মজা, এ বইয়ের গল্পগুলোও পড়তে তেমনি মজা। ছবি এবং গল্প দিয়ে সুন্দর সাজানো-গোছানো বইটি অনেক দিন বসে বসে একটু একটু করে পড়া যাবে। আর পাওয়া যাবে সন্দেশের মতো স্বাদ।