ভূমিকা পাওলাে কোয়েলহাের “দ্য আলকেমিস্ট” উপন্যাসের আদলে বিবৃত এক আধ্যাত্মর প্রকাশ। এ প্রকাশ যেমন চমৎকার তেমনি আত্ম উন্নয়নের আশাবাদী উপাখ্যান। ফলে একজন কিশাের যেমন বইটি পড়ে আনন্দ পাবে তেমনি অশীতিপর বদ্ধও পেতে পারেন নতুন উদ্দীপনা।। বইটি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে পাঠকধন্য বই হিসেবে স্বীকতি পেয়েছে। কোয়েলহাে বইটি লিখেছিলেন পর্তুগীজ ভাষায়। বইটির ইংরেজি ভাষার অনুবাদ থেকে আমি বাংলায় ভাষান্তর করি। বইটি অনুবাদে হাত দিয়ে যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে অস্বস্তিতে ফেলেছে, সেটি হচ্ছে এই বইয়ে ব্যবহৃত নানা বাক্য, শব্দরাজি। বেশ কিছু বাক্য, শব্দ- দ্ব্যর্থবােধক অথবা বহুঅর্থক। আমার পরিশ্রমের বেশিরভাগই ব্যয় হয়েছে বইটির শব্দের প্রচলিত অর্থের পেছনে ভাবার্থ বা সংকেত-অর্থ খুঁজতে। আবার একাধিক শব্দে গঠিত কিছু যৌগিক শব্দ অভিধানে পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে মৌলিক অর্থারােপ করতে হয়েছে। কোথাও কোথাও বাধ্য হয়ে বন্ধনী () ব্যবহার করা হয়েছে। বইটি ভাষান্তর করতে আমার অনেক শুভানুধ্যায়ী, প্রাজ্ঞ মানুষের সহৃদয় সহায়তা নিতে হয়েছে। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হিল্লোল দত্ত, সাইফুর মিশু, জাহিদ হােসেন, আরমান রশীদ, সাজ্জাদ আলী, সেরীন ফেরদৌস, আশরাফুল হাসান, মনিরুল ইসলাম, প্রশান্ত ত্রিপুরা, ইনাম আল হক, নীলাদ্রি চাকী, মনজুরুল আজিম ও খসরু চৌধুরীর কাছে। বইটি ভাষান্তর করতে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন পারিবারিক বন্ধ প্রকাশক মজিবর রহমান খােকা। আরেক পারিবারিক বন্ধ মঈন আহমেদ বইটির অঙ্গসজ্জা করে দিয়েছেন। তাঁদের বিশেষ কতজ্ঞতা জানাই। নিজের ব্যস্ততার মধ্যেও খ্যাতনামা প্রচ্ছদ শিল্পী রাগীব আহসান বইটির প্রচ্ছদ করে দেওয়ায় তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই। “দ্য আলকেমিস্ট” এমন একটি আধ্যাত্মিক অভিযাত্রার কাহিনি যার পুরােপুরি স্বাদিষ্ঠ অনুবাদ সম্ভব না। তারপরও শাব্দিক ও মূলানুগ অর্থ বজায় রেখে অনুবাদের চেষ্টা করেছি। বইটি সুধী পাঠকের আনুকূল্য পেলে তবেই আমার প্রচেষ্টা স্বার্থক হবে। -ফারহানা আজিম শিউলী টরন্টো, কানাডা
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।