‘নবজাতকের সুন্দর নাম’ বইয়ের সংকলকের কথা: নাম। ছোট্ট একটি শব্দ। এর গুরুত্ব অসীম। অপরিসীম। বিশ্বকাননে নাম একেকটি সুগন্ধি ফুল। নাম বিশ্বালোকের একেকজন সদস্য। আত্মপরিচয়ের প্রধান নিয়ামক হচ্ছে নাম। নাম মানুষের সত্তার পরিচয় বহন করে। শুধু মানুষ নয়; পশুপাখি, গাছপালা, কীটপতঙ্গসহ সবকিছুরই পরিচয় মিলে তার নামের মাধ্যমে। প্রতিটি ভাষায়ই রয়েছে নামের গুরুত্ব। নামের মাধ্যমে যেমন একজন মানুষকে শনাক্ত করা যায়, তেমনি তার ঐতিহ্যের শেকড়ও আবিষ্কার করা যায়। তাইতো নাম স্বীয় অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সুন্দর নাম দ্বারা নিজের পরিচয় দিতে ভালো লাগে। তাই যে ভাষারই হোক নাম অৰ্থবোধক ও সুন্দর হওয়া বাঞ্ছনীয়। একথা অনস্বীকার্য যে, ভাষার কোনো ধর্মাধৰ্ম নেই। ভাষার কারণে নাম মুসলিম কিংবা অমুসলিম হয় না। নামকরণের ক্ষেত্রে ভাষা মুখ্য নয়। মুখ্য হলো ধর্ম। আর মুসলমানের নামের জন্য পূর্বশর্ত হলো তা শিরকমুক্ত হওয়া। অর্থাৎ নামের অর্থ যদি শিরক যুক্ত হয়, যে ভাষারই হোক তা পরিত্যাজ্য। বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো অসুন্দর নাম শুনলে আরবি হওয়া সত্ত্বেও তা পরিবর্তন করে সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম রেখে দিতেন। প্রতিটি শিশু কিংবা নবজাতকই সবার কাছে অমূল্য সম্পদ। সবার কাছেই সে আদরের দুলাল। এ আদুরে ধনের প্রতি অভিভাবকের অন্যতম প্রধান কর্তব্য হলো তার সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম রাখা। অসুন্দর নাম বহন করে যাতে সন্তানকে আজীবন পস্তাতে কিংবা লজ্জিত হতে না হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সচেতন অভিভাবকের। নবজাতকের সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম রাখা মুসলমানের প্রতি ধর্ম আরোপিত কর্তব্য। এ কর্তব্য পালনে সবার যত্নবান হওয়া আবশ্যক। সুন্দর অর্থবোধক হলে যেকোনো ভাষার শব্দেই নাম রাখা যেতে পারে। শ্রুতিমধুর ও অর্থবহ একটি নামের জন্য মানুষ উদগ্ৰীব থাকে। ভালো নাম সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ, রুচি ও কৌতুহল সীমাহীন। যা নিবারণ করা সহজ কাজ নয়। তবে হ্যাঁ! এতদঞ্চলে আরবি কিংবা ফার্সি ভাষায় নাম রাখা ঐতিহ্যগত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে একটি সমৃদ্ধ নাম সংগ্রহ রচনার ইচ্ছে করি। কিন্তু কাজটি যে একেবারেই সহজসাধ্য নয়, তা টের পাই অন্ধের সাদাছড়ি হাতে পল্লির মেঠোপথ খোঁজার মতো পথিক বনে। এক্ষেত্রে ইচ্ছার তারিটিকে লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিতে সহায়ক হিসেবে পাই বিভিন্ন অভিধান, প্রচলন, উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট, পত্রিকা, সামাজিক মাধ্যম ও কিছু বইপুস্তক। একে সম্বল করেই একসময় আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে কিছু একটা হয়েছে বলে ঠাওর করি। সংকলনটির নাম দেই ‘নবজাতকের সুন্দর নাম’৷ বাজারে প্রচলিত নামের বইয়ের তুলনায় ‘নবজাতকের সুন্দর নাম’কে সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়েছি। এতে পাঠকের সুবিধার্থে বাংলা বর্ণানুক্রম অনুসারে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে। ছেলে ও মেয়ের নাম ভিন্ন অধ্যায়ে না। এনে একসাথেই পৃথক শিরোনামে সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন কলামে প্রতিটি নামের ইংরেজি ও আরবি বানান, বাংলায় সঠিক উচ্চারণ, অর্থ ও মূল ভাষা এবং বইটির শেষাংশে কতিপয় ডাকনামা” উল্লেখ করা হয়েছে। এ খুঁজে পাওয়া সহজবোধ্য ও তৃপ্তিময় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। খ্যাতনামা ও পরিশীলিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বইঘর’র স্বত্বাধিকারী বন্ধুবর এস এম আমিনুল ইসলাম শিশুর প্রতি মমতার হাত বুলানোর মতোই ‘নবজাতকের সুন্দর নামা'কে প্রকাশনার আলোয় আনার মহান আল্লাহ তাকেসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম বদলা দান করুন। আল্লাহ তায়ালা যেন একে সকলের নাজাতের উসিলা হিসেবে কবুল করেন। ‘নবজাতকের সুন্দর নামটি অভিভাবকের হাতে শিশুর মতোই প্রিয় অবয়বে সযত্নে তুলে দেয়ার প্রচেষ্টায় কমতি ছিলো না। আশা করি প্ৰত্যেকের কাছেই এটি শিশুর মতোই ভালো লাগবে। তারপরও যেকোনো গঠনমূলক পরামর্শ জানালে তা সাদরে গ্রহণ করার প্রত্যাশা রইলো। -এসএম আনওয়ারুল করীম
‘নবজাতকের সুন্দর নাম’ বইয়ের প্ৰকাশকের কথা: বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন ‘নিশ্চয় তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন তোমাদের নাম এবং তোমাদের পিতার নামে আহবান করা হবে। অতএব, তোমরা নাম সুন্দর করে রাখবে।’ মানুষের নামকরণের ইতিহাস তেমন অস্পষ্ট নয়। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম আ. থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষ সৃষ্টি হয়েছে তাদের সবারই একটা নির্দিষ্ট নাম আছে। তবে বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশ, ধর্ম, কৃষ্টি, গোষ্ঠী, বংশ ইত্যাদির প্রেক্ষিতে নামের বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। নাম মানুষের পরিচয় বহন করে। নামের মাধ্যমেই মানুষের ধর্ম-কৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। তাই নাম রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। অর্থবহ ও ঐতিহ্যবাহী নামের প্রভাব অনস্বীকার্য। এ জন্য সমাজদরদি, গবেষক ও ওলামায়ে কেরাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নামের সাথে মিলিয়ে নামকরণের তাগিদ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মনীষীগণ বিশ্বব্যাপী মুসলিম হিসেবে পরিচিতি লাভ করার জন্য আরবি শব্দের নামকরণের সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করেছেন। পরবর্তীতে ফারসি শব্দেও নামকরণের প্রচলন হয়। বাংলাদেশে এমন অসংখ্য পিতামাতা ও অভিভাবক আছেন যারা নিজ সন্তানসন্ততির সুন্দর ও অর্থবহ নামকরণে আগ্রহী। কিন্তু প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও নাম নির্বাচনে কোনো সঠিক নির্দেশনা না থাকার কারণে তাদের পক্ষে তা হয়ে ওঠে না। তাছাড়া ভুলভ্রান্তিমুক্ত অর্থবহ নাম খুঁজে পাওয়াও সহজসাধ্য নয়। তা সত্ত্বেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আদর্শ ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করার জন্য বহুদিন ধরেই একটি নামের সংকলনগ্রন্থ প্রকাশ করার তাগিদ অনুভব করি। আর এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বন্ধুবর বহুগ্ৰন্থ প্রণেতা ও সুসাহিত্যিক মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীমকে একটি সমৃদ্ধ নামসংকলন গ্রন্থ রচনার অনুরোধ জানাই। তিনি অত্যন্ত যত্ন করে আমাদের অনুরোধ রক্ষা করেছেন বলে তাকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। তার সংকলিত ‘নবজাতকের সুন্দর নাম’ গ্রন্থটি পাঠক মহলে দারুণভাবে সমাদৃত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। —এস এম আমিনুল ইসলাম