"আমার গল্প" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ সম্পত্তি দখলের জন্য গনি মিয়াকে খুন করে তার তিন ছেলে-মেয়েকে আলাদা আলাদা ট্রেনে চাপিয়ে দিয়েছিলাে সাদুল্লাহর চাচারা। আজ থেকে প্রায় আশি বছর আগে নােয়াখালী থেকে ভাসতে ভাসতে এগারাে বছর বয়সে ঢাকার ফুলবাড়িয়া স্টেশনে এসে নেমেছিলাে সাদুল্লাহ। এ বইয়ে সেই ছিন্নমূল সাদুল্লাহর জীবনসংগ্রামের গল্প যেমন আছে, তেমনি আছে পুরান ঢাকায় জন্ম নেয়া সাদুল্লাহ ওরফে সহিদ মিয়ার বড় ছেলে ফরিদ কবিরেরও গল্প, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ঘটনা ও দুর্ঘটনা, সমাজের নানা ধরনের, নানা শ্রেণির মানুষের সংস্রব যার জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে, ঋদ্ধ করেছে এবং ক্রমশ বদলে তাকে এক ভিন্ন মানুষে পরিণত করেছে। এ গল্প তাই আত্মীয়-পরিজনহীন এ শহরে সাদুল্লাহর লড়াইয়ের গল্পই নয়, এ গল্প তার প্রথম সন্তান ফরিদ কবিরের ক্রমবিবর্তনের কাহিনি, যিনি মানুষের বিবিধ প্রেম ও ঘৃণার মধ্য দিয়ে নিজের পরিচয় সন্ধান করে চলেছেন আজও। এ রচনায় ধরা পড়েছে এ দেশের সাহিত্য ও সাংবাদিকতাজগতেরও নানা অজানা কাহিনি। ফলে ‘আমার গল্প’ শুধুই ফরিদ কবিরের নিজের গল্প নয়, এ গল্প তার আশেপাশের পরিচিত চরিত্রসৃহেরও। এ গল্প তাই কোনাে মহৎ লােকের অর্ধসত্য কাহিনি নয়, হয়ে উঠেছে চরম সত্য আর, আলাে-অন্ধকারময় জীবনেরই অনুপম আখ্যান।
তার বর্ণনাভঙ্গি এতােই সংক্রামক যে সেই আচ্ছন্নতা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে পাঠকের পক্ষে, এমনকি পাঠের অনেক পরেও যে কোনাে ছন্দেই তিনি অনায়াস। এমন অনেক ছন্দও তিনি ব্যবহার করেছেন যার উদাহরণ বাংলা কবিতায় বিরল। পদ্য বা গদ্য- যে-কোনাে রচনায় বরাবর সৃষ্টিশীল এবং প্রথাবিরােধী এই কবি-লেখকের জন্ম ঢাকায়, ১৯৫৯ সালের ২২ জানুয়ারিতে। বড় হয়েছেন। পুরােনাে ঢাকার জিন্দাবাহারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ফরিদ কবির মাস্টার্সে পড়লেও পরীক্ষা দেননি। মুদ্রণ ব্যবসা দিয়ে জীবিকা শুরু করলেও পেশা বদল করেছেন বারবার। ব্যবসা ছেড়ে চাকরি করেছেন ব্যাংকে, সেটা ছেড়ে যােগ। দিয়েছেন সাংবাদিকতায়; সহকারী সম্পাদক ও অতিথি সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন দৈনিক ‘জনপদ’, ‘আজকের কাগজ, ভােরের কাগজ ও ‘আমাদের সময়’-এ। আর, এখন আছেন। জনসংযােগ পেশায়, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিতে। এ ছাড়াও, সম্পাদনা করেছেন শিল্পসাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সাপ্তাহিক ‘কাগজ’ ও মাসিক নতুনধারা। কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ ও সম্পাদনাসহ তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৫টি। ঝর্ণা ইয়াসমীন তার স্ত্রী এবং মুগ্ধ চন্দ্রিকা তার একমাত্র মেয়ে।