"প্লেটো : সিম্পোজিয়াম" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ সিম্পােজিয়াম (ইংরেজিতে সিম্পােজিয়াম; গ্রিকে সিম্পােজিয়ন)। যদি প্লেটোর একাধিক শ্রেষ্ঠ রচনার কথা বলা হয় তবে সাধারণত রিপাবলিক ও সিম্পােজিয়াম-এর নাম করা হয়; কখনাে কখনাে এমন বলা হয় যে, উৎকর্ষে সিম্পােজিয়াম অতিক্রম করে যায় রিপাবলিক-কেও। এক পানাসরে প্রদত্ত প্রেমসম্পর্কিত বক্তৃতার সংকলন হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে এই সংলাপটিকে। এতে মােট সাতটি বক্তৃতা স্থান পেয়েছে এবং সেই আসরে সক্রেটিসের প্রদত্ত বক্তব্যে প্রেমের ঐশ্বরিক প্রকৃতির কথা শুনতে পাই আমরা। অন্য বক্তাগণের মধ্যে সক্রেটিসের যুবক বন্ধু ফিদ্রাস তাঁর বক্তৃতায় দাবি করেন যে, সদ্গুণসম্পন্ন ব্যক্তি এবং তরুণ প্রেমাস্পদের মধ্যকার প্রেম হলাে উচ্চপর্যায়ের প্রেম, মহৎ জীবনের প্রধান প্রণােদনা। আগাথনের প্রথম ট্র্যাজেডি রচনায় পুরস্কারপ্রাপ্তিতে এই পানাসরের আয়ােজন করা হয়েছিল। তার প্রেমাস্পদ পউসিনিয়াস সেই আসরে সাধারণ প্রেম তথা দৈহিক প্রেমের সাথে স্বর্গীয় প্রেমের পার্থক্য করেন, আর বলেন যে, সেই স্বর্গীয় প্রেম হচ্ছে সদ্গুণ ও দর্শনের প্রেম। এরিক্সিমাকাস নামক চিকিৎসক জানান যে, প্রেম হচ্ছে দেহের মধ্যকার বিভিন্ন বিপরীতমুখী উপাদানের সামঞ্জস্যবিধানের নীতি। নাট্যকার অ্যারিস্তোফানিজ এক কিংবদন্তি তুলে ধরে বর্ণনা করেন যে, আদিতে মানুষের ছিল চার হাত ও চার পা, দুই মুখ ও এক মাথা। জিউসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কারণে তিনি মানুষকে অর্ধেক করে কেটে দেন এবং তার পর থেকে এই দুই অংশ প্রেমের মধ্য দিয়ে একত্রিত হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আগাথন প্রেমদেবতার প্রশংসা করে তাকে সকল সদ্গুণের আধার হিসেবে বর্ণনা করেন। সবশেষে সক্রেটিস তাঁর বক্তৃতায় তুলে ধরেন যে, ভৌত সামগ্রীর প্রতি প্রেম খােদ সৌন্দর্যের প্রকৃতির প্রতি প্রেমে উন্নীত হতে পারে এবং তার মাধ্যমে মানুষ ঐশীলােকের সন্ধান পেতে পারে। পরিশেষে সক্রেটিসের প্রেমাস্পদ আসেবাইয়াদিয়াজের কথাবার্তা ও আচরণে আমাদের ধারণা জন্মে যে, প্রেম হলাে এক ধরনের উন্মত্ততা। এই সংলাপটিতে প্লেটো প্রমের ধারণার সন্ধান পাওয়া যায়; এবং সেইসাথে সক্রেটিসের চরিত্র-বৈশিষ্ট্যেরও একটি চমত্তার চিত্রায়ন এটি। মানুষের সকল চিন্তা ও কার্য যে অমরত্বের আকাঙ্ক্ষায় প্রণােদিত সেই প্রত্যয়ের উচ্চারণ শােনা যায় এই সংলাপটিতে।
১৯৫৩ সালের ১ লা অক্টোবর নরসিংদি জেলার বদরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে নীতি বিশ্লেষণে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশের সচিব পদ থেকে অবসর লাভ করেন (সর্বশেষ দায়িত্ব পালন-বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক, ম্যানিলা)। তাঁর আগ্রহের বিষয় বিজ্ঞানের দর্শন ও তুলনামূলক মিথলজি। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত পুস্তুক : প্লেটোর রিপাবলিক-এর ভূমিকা; রবীন্দ্রনাথ : কার্ল পপারের নির্বাচিত দার্শনিক রচনা; প্লেটোর আইনকানুন; রিপাবলিক, সিম্পেজিয়াম, রাষ্ট্রনায়কসহ প্লেটোর ১৭টি সংলাপের অনুবাদ এবং দর্শনের আরো কিছু ধ্রুপদী গ্রন্থ।