বর্ণমালা চিনে ও বাক্যপাঠ করতে পারে এমন বয়সীদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত গল্পের বই। প্রথম শ্রেণি কিংবা দ্বিতীয় শেণির শিক্ষার্থীরা মূলত ছবি দেখেই পড়া শেখে। হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভালুক, বানর এসব নিয়ে তাদের কল্পনা আর কৌতূহলের অন্ত নেই। টিভির কার্টুনে কিংবা বড়দের কাছ থেকে এসবের গল্প শুনে শুনে তাদের মনোজগতে এসবের ছবি আঁকা হয়ে যায়। কেউ কেউ হয়তো চিড়িয়াখানায় গিয়ে কিছু পশুপাখির সাথে পরিচিত হতে পারে। কিন্তু বাকিদের ভরসা বই। দীপু মাহামুদের লেখা ‘হাতির সাথি’ বইটি তেমনই একটি বই। এক বনের হাতিদের গল্প রয়েছে বইটিতে। খরায় বনের পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়াতে হাতিদের পানি পানে খুব কষ্ট হতে লাগল। কাছাকাছি পানি না থাকায় তারা পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। বাবু হাতি পিপাসায় আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়ল। উপায় না দেখে মা হাতি বাবু হাতিকে নিয়ে পানি খুঁজতে বের হলো। খুঁজতে খুঁজতে অনেক দূরে একটি ঝিল খুঁজে পেল। কিন্তু সেই ঝিলের পানি এতটাই দূরে যে বাবু হাতি গিয়ে সেই পানি পান করতে পারল না। মা হাতি ভাবতে লাগল কী করে পানি পান করা যায়। অবশেষে সে বানরকে পানির কথা জানালো। বানর গিয়ে বাঘ, শেয়ালকে ডেকে আনলো। সবাই মিলে একটা নালা কেটে ঝিলের পানি একটি ডোবার মধো আনলো আর তৃপ্তি করে সবাই পান করল। আসলে সবাই যখন বিপদে পড়ে তখন কেউ কারো শত্রæ থাকে না। বিপদ থেকে সবাই মিলে উদ্ধার পেতে চায়। বনের পশুরা একে অপরকে খেয়ে বেঁচে থাকে। যার যত শক্তি সে তত বড়। গল্পে গল্পে আমরা পশুদের একত্র করলেও বাস্তবে কিন্তু তা সম্ভব নয়। কারণ সব পশুর মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি মায়া-মমতা নেই। এদের ক্ষুধাই প্রধান বিষয়। ক্ষুধা মেটাতে ওরা সব কিছু করতে পারে; কিন্তু মানুষের মধ্যে আছে ভালোবাসা, মায়া-মমতা। তাই মানুষ পরিবারের মধ্যে থেকে ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের শিক্ষা লাভ করে। বইটি সহজপাঠ্য ও আকর্ষণীয়। ছোট ছোট বাক্যে লেখা ১৬ পৃষ্ঠার এ বইটি নিঃসন্দেহে সংগ্রহযোগ্য। চাররঙা বইটির ছবিগুলো দেখে মনে হবে জীবন্ত! গল্পে হাতির সাথিরা খুবই উপকারী। আমরাও যেন এদের মতো পরোপকারী হতে পারি।
দীপু মাহমুদ। জন্ম ২৫ মে ১৯৬৫, নানাবাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার গ্রাগপুর গ্রামে। শৈশব ও বাল্যকাল কেটেছে দাদাবাড়ি হাটবোয়ালিয়া গ্রামে। বেড়ে ওঠা স্নেহময়ী, কালিশংকরপুর, কুষ্টিয়া। পিতা প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল হুদা, মা হামিদা বেগম। পড়াশোনা করেছেন কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতায়। আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সায়েন্স ফিকশন সাহিত্য পুরস্কার, এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার, শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী স্বর্ণপদক, নবাব সিরাজউদ্দৌলা স্বর্ণপদক, আনন্দ আলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সাহিত্য দিগন্ত লেখক পুরস্কার, আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতিপদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন সম্মাননা।