বিকেলবেলার সূর্যের আলো এসে পড়েছে নদীর পানিতে। নদীতে ভীষণ স্রোত। বর্ষাকালে নদীতে স্রোত হয়। গাল্লুমিয়া নদীর স্রোতের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। তার ইচ্ছে করছে সাঁতরে নদীর ওপারে চলে যেতে। তারপর চলে যাবে অনেক দূরে। গাল্লুমিয়া যেতে পারছে না। কারণ সে সাঁতার জানে না। তার বয়স ১০ বছর। সে মহিষখোঁচা ইশকুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ইশকুলের খাতায় তার একটা ভালো নাম আছে। সেই নামে কেউ ডাকে না। সবাই তাকে গাল্লুমিয়া বলে ডাকে। কেন সবাই তাকে গাল্লুমিয়া বলে ডাকে সেই কথা সে জানে না। গাল্লুমিয়ার মন খারাপ। তার কান্না পাচ্ছে। কিন্তু সে ঠিক করেছে কাঁদবে না। মা তাকে বকেছেন। ওদের পাশের বাড়িতে জয়ীরা থাকে। জয়ীর বাবা বাজার থেকে মরু গি নে এনে উঠোনে বেঁধে রেখেছিলেন। গাল্লুমিয়া গিয়ে তার বাঁধন খুলে দিয়েছে। সেই মুরগি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পাড়ার সবাই বলে গাল্লুমিয়া ভীষণ চঞ্চল। সে একমুহূর্ত স্থির থাকে না। সবসময় লাফিয়ে চলে। আর লাফিয়ে চলতে গিয়ে নানান অঘটন ঘটে। তখন সকলে তাকে বকা দেয়। গাল্লুমিয়ার একদম ছোট থাকতে ইচ্ছে করে না। এক লাফে বড় হয়ে যেতে মন চায়। বড় হয়ে গেলে কেউ আর তাকে বকবে না। তখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। নদীর স্রোতের দিকে তাকিয়ে গাল্লুমিয়ার রাগ হলো। মনে মনে ভাবল নদীতে পানি না থাকলে ভালো হতো। তাহলে হেঁটে নদী পার হয়ে যাওয়া যেত। তখন নদীর পানিতে ভুঁস করে এক ডলফিন ভেসে উঠল। গাল্লু মিয়া বইতে ডলফিনের ছবি দেখেছে। তারা হয় ছাই রঙের। এর গায়ের রঙ শ্যাওলা সবুজ। চোখের সামনে ডলফিন দেখে গাল্লুমিয়া অবাক হয়েছে। এই নদীতে ডলফিন থাকার কথা না। থাকলে সে আরও আগেই দেখতে পেত। স্রোত কেটে ডলফিন সামনে চলে এলো। গাল্লুমিয়াকে চমকে দিয়ে বলল, ‘কী হয়েছে তোমার?’ অবাক হয়ে গাল্লুমিয়া বলল, ‘কে তুমি?’ ‘আমার নাম জলনৃ।’ ‘কোথায় থাকো?’ ‘পানির নিচে। সমুদ্রে আর নদীতে।’ ‘তুমি আমাদের ভাষায় কথা বলছ কেমন করে?’ ‘আমরা অনেক কিছুপারি। তুমি মন খারাপ করেছ। পা নির নিচ থেকে সেই শব্দ শুনে বুঝতে পেরেছি।’ ‘তোমরা কেমন করে বোঝ?’ ‘আমাদের অনেক বুদ্ধি। পৃথিবীতে মানুষ এসেছে মাত্র ৫ কোটি বছর আগে ...
দীপু মাহমুদ। জন্ম ২৫ মে ১৯৬৫, নানাবাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার গ্রাগপুর গ্রামে। শৈশব ও বাল্যকাল কেটেছে দাদাবাড়ি হাটবোয়ালিয়া গ্রামে। বেড়ে ওঠা স্নেহময়ী, কালিশংকরপুর, কুষ্টিয়া। পিতা প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল হুদা, মা হামিদা বেগম। পড়াশোনা করেছেন কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতায়। আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সায়েন্স ফিকশন সাহিত্য পুরস্কার, এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার, শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী স্বর্ণপদক, নবাব সিরাজউদ্দৌলা স্বর্ণপদক, আনন্দ আলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সাহিত্য দিগন্ত লেখক পুরস্কার, আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতিপদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন সম্মাননা।