নিরলস গবেষণার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধচর্চাকে যে সকল লেখক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন তাঁদের অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের এই নিবেদিতপ্রাণ গবেষক ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাঁর উদ্যোগে আঞ্চলিক পর্যায়ে তৈরি হচ্ছে বিপুলসংখ্যক তথ্যসংগ্রাহক ও লেখক কর্মীবাহিনী। যাঁদের সহযোগিতায় রচিত হচ্ছে উপর্যুক্ত বিষয় আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থ। বিগত তিন দশক ধরে তাঁর রচিত বহুসংখ্যক প্রবন্ধের মধ্য থেকে বাছাইকৃত মুক্তিযুদ্ধের প্রবন্ধের সংকলন বর্তমান গ্রন্থ। প্রবন্ধগুলোতে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধচর্চার ধারা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার বিরাজমান সমস্যা এবং সম্ভাবনার দিকনির্দেশনা, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপিত ভাস্কর্যগুলোর বর্ণনা ও শৈল্পিক বিশ্লেষণ রয়েছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সর্ববৃহৎ ক্ষেত্র রায়েরবাজার বধ্যভূমির একাত্তরের নৃশংসতার বিবরণসহ বর্তমান পরিস্থিতির চিত্র পাওয়া যাবে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ, বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা এবং মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারীদের জন্য আমাদের দায় সম্পর্কে মূল্যায়নধর্মী তিনটি প্রবন্ধ আমাদের অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাবে। শহীদ জননী সম্পর্কে স্মৃতিচারণমূলক একটি প্রবন্ধে তাঁর সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান দেবে। জানা যাবে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীদের তৎপরতা ও এদেশে বেড়ে ওঠা স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্থান ও বিকাশধারা। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের ভূমিকা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা, শরণার্থীদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার আলোচনা রয়েছে। শত্র“মুক্ত বিভিন্ন জেলার ইতিহাস ছাড়াও ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে আটক বন্দি বঙ্গবন্ধুর বিচার ও বহির্বিশ্বে প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে। ভিন্ন আঙ্গিকে, বিষয় বৈচিত্র্য এবং ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপিত প্রতিটি প্রবন্ধই পাঠককে নতুন চিন্তার খোরাক জোগাবে।
অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মান, এম.এ.. পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। কর্মজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট, কলা অনুষদের ডিন, সিনেট সদস্য ছিলেন। তিনি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিনেট সদস্য। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাল, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহিদ আবুল বরকত জাদুঘর ও সংগ্রহশালা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। গবেষক, প্রাবন্ধিক এবং গ্রন্থ প্রণেতা ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। তিনি মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাকর্মে নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, বাংলাদেশের সাথে বহির্বিশ্বের সম্পর্ক তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর পরিচালিত সামাজিক সহায়তা উদ্যোগ। (বীরাঙ্গনা সহায়তা কার্যক্রম) বীরাঙ্গনাদের নিয়ে গবেষণা, তাঁদের পুনর্বাসন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে অসামান্য অবদান রাখে। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন অপরাজেয় বাংলা ফাউন্ডেশন (মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ি) শিক্ষা ও গবেষণার জন্য স্ত, দেলোয়ার পেয়েছেন সম্মাননা ও পুরস্কার। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য রোটারি ক্লাব সম্মাননা ২০০৮ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদানের জন্য 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪' লাভ করেন। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫টি এবং দেশ-বিদেশে প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা ৫৫টি।