ভূমিকা মানুষ তার মনের ভাব আদান-প্রদান করে ভাষার সাহায্যে। পৃথিবীর অসংখ্য দেশের অসংখ্য মানুষের আছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা। তেমনি আমাদের বাংলা ভাষা। মুখের ভাষাকে পরিশীলিত, মার্জিত ও সহজবােধ্য করার জন্য প্রয়ােজন নিজ নিজ মাতৃভাষার সঠিক উচ্চারণ। কেননা, শুদ্ধ উচ্চারণের মধ্যদিয়েই একটি শব্দ তার প্রকৃত ধ্বনি ও অর্থব্যঞ্জনা লাভ করে। আবার অশুদ্ধ উচ্চারণ সংশ্লিষ্ট শব্দটির অর্থের পরিবর্তন ঘটিয়ে পংক্তি, চরণ বা কথােপকথনকে বিপরীত অর্থে উপস্থাপিত করতে পারে। সুতরাং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই আমাদের পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের জন্যে প্রয়ােজন শুদ্ধ (প্রমিত) উচ্চারণ শেখা এবং এর প্রয়ােগ করা। পৃথিবীর অনেক উন্নত ভাষার মতাে বাংলা ভাষাও সবসময় ‘উচ্চারণ অনুযায়ী লিখিত হয় না, কিংবা লিখিত রূপ অনুযায়ী উচ্চারিত হয় না। এর পরেও বলা যায় যে, আমাদের বাংলা ভাষার ধ্বনিশৃঙ্খলা বা উচ্চারণরীতি পৃথিবীর সমৃদ্ধ অনেক ভাষার থেকেও বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিন্যস্ত। দেশের নানা অঞ্চলের মানুষ নানান আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে থাকলে আমাদের একে অন্যের পারস্পরি মনােভাব বুঝে ওঠা কষ্টকর হবে। আর এই সমস্যার সমাধানকল্পেই ভাষার সর্বজনগ্রাহ্য এবং সর্বজনবােধ্য একটি প্রমিত (Standard) উচ্চারণরীতি আছে। আমরা এই রীতি অনুসারে শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ আয়ত্ব করতে চেষ্টা করব। যদিও আমরা জানি যে, উচ্চারণ একটি বাচনিক প্রক্রিয়া। কোনাে নির্দেশ অনুসরণ করে উচ্চারণ স্থির বা নির্ধারিত হয় না। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে বানান যেমন পরিবর্তিত বা বদল হয়, তেমনি প্রমিত উচ্চারণও পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। যুগে যুগেই উচ্চারণবিশারদরা কেবল শব্দের উচ্চারণগুলিকে সর্বসাধারণের সুবিধার্থে সূত্রবদ্ধ করেন। বাংলাদেশে প্রমিত উচ্চারণচর্চাকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে উন্নীত এবং সাধারণ্যে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা প্রদানে পথিকৃৎ-এর ভূমিকা রেখেছেন প্রয়াত অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস। এক্ষেত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। ‘উচ্চারণ শিক্ষণ’ গ্রন্থে অপেক্ষাকৃত সহজবােধ্য উপায়ে উচ্চারণের সূত্র ও রীতি আলােচনা করতে গিয়ে আমাকে সহায়তা নিতে হয়েছে ভাষাতত্ত্ব, ধ্বনিতত্ত্ব, উচ্চারণরীতিসহ অন্যান্য ব্যাকরণ গ্রন্থের।