ভুমিকা এই গ্রন্থে রয়েছে দুটি উপন্যাস। ‘ফিরিঙ্গি ঠগি' ও ‘কত কক্ষে কাগজ পোড়ে’।
'ফিরিঙ্গি ঠগি'-র সময়কাল অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ। ইংরেজ কুঠিবাড়ির আলোগুলো ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। আর তার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় রাজা-নবাবদের ঘরের বাতিগুলো নিভে যাচ্ছে। রেলপথ চালু হয়নি। হাতি, ঘোড়া, গো-শকট বা নৌকোয় কেউ কেউ যাতায়াত করলেও অধিকাংশ ভারতবাসী পদব্রজেই যাতায়াত করত দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। একটা বিরাট অংশের মানুষ পথেই হারিয়ে যেত। ঘরে ফিরত না। কেউ কেউ বলতেন ভারতের পথে-ঘাটে সে সময় নাকি ঘুরে বেড়াত আরও একদল মানুষ। যাদের হাতের ছোয়ায় নাকি মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে যেত পথিকের দল। সেই মানুষদের সন্ধানে পথে নামলেন এক ব্রিটিশ রাজপুরুষ। উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান। পথে নামলেন পৃথিবীর ইতিহাসে কুখ্যাততম ‘ঠগি'-র সন্ধানে ৷
‘কত কক্ষে কাগজ পোড়ে' উপন্যাসের পটভূমি দ্বাদশ শতক। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। এককথায় এই প্রাচীন দেশের যাবতীয় ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র ছিল নালন্দা। রত্নদধি, রত্নসাগর, রত্নরঞ্জক—নালন্দার সুবিশাল বহুতল তিন গ্রন্থাগারে থরে থরে সাজানো তালপাতা, রেশম, তুলোট কাগজের পুঁথিতে রাখা ছিল মহাসমুদ্রসমান জ্ঞান ভাণ্ডার। পুঁথির সংখ্যা দশ লক্ষ। ছাত্র সংখ্যা দশ হাজার। পাঁচটি মহাকক্ষ ছাড়াও তিনশোটি কক্ষ ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কত হাজার-হাজার শিক্ষক ও ছাত্র!
কিন্তু ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি বড় বিচিত্র। তুর্কি সেনাপতি বক্তিয়ার খলজি এসে হানা দিলেন নালন্দায়। সেই সময়ে নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে প্রাণের চেয়েও দামি পুঁথিগুলোকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন কয়েকজন মানুষ। এই উপন্যাসের নামকরণে 'কক্ষ' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে।