“কমলাক্ষে অকাল বোধন”বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা : পুলিশ-রাষ্ট্র-রাজনৈতিক নেতা-চিনিকল কর্তৃপক্ষের সাথে সরাসরি লড়াইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখ হারায় যে সাঁওতাল কৃষক, অদিতির গল্পে সেই কৃষকের। অকাল বােধন হয়। কমলাক্ষ বাস্কে কৈশােরে তার বান্ধবী শনিচরী মুমুর সাথে বিলে নীল শাপলা তুলতে যেত আর কমলাক্ষের চোখ নীলপদ্মের মতই সুন্দর। তবু বান্ধবী শনিচরী যতদিনে স্ত্রী এবং সন্তানের মা। হয়ে উঠেছে, পুলিশ বা মাস্তানবাহিনী তার গায়ে ধাক্কা দিতে এলে কমলাক্ষ বাস্কে পুরাণের নায়ক রামের। মতই সামনে এসে দাঁড়ায়। তার চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। যেমন রাম তাঁর চোখে তীর বিদ্ধ করে দেবী দুর্গাকে দিতে চেয়েছিলেন নীলপদ্মের অঞ্জলি। অন্যান্য গল্পগ্রন্থের মত এ গ্রন্থেও লেখক অদিতির মনােভুবন সুদূরপ্রসারী । মৃত মানুষের টিলা মহেঞ্জোদারাের গল্প বলে এই গ্রন্থ যার পাশ দিয়ে একদা বয়ে যাওয়া ঘাগর-হাককর নদীও আজ মৃত। সুন্দরবনের যে। বাওয়ালি নারীরা স্বামী বাদায় গিয়ে বাঘের শিকার। হলে বাঘ বিধবা হয়ে যায়, তাদের করুণ আখ্যান উঠে আসে এই গল্পগ্রন্থে। আবার এই গল্পগ্রন্থ বলে। ইতালীয় নারী ফ্লোরিনা পন্টির গল্প যে তার সাত মাস বয়সী গর্ভস্থ সন্তানকে ঢাকার এক কফিশপে বসে চিঠি লিখতে লিখতে সহসা গুলিবিদ্ধ হয়। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল হবার স্বপ্নে বিভােল যে মেয়েটি পরবর্তী জীবনে হয় কোন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রজেক্ট অফিসার আর ভালবাসার মানুষটিকে তার আর বিয়ে করা হয়ে ওঠে না, সে যেন কর্মমুখী অথচ আধুনিক আর সনাতনী মনােভাবের দ্বন্দে অস্থির এসময়ের বাংলাদেশের প্রতিটি অগ্রসর নারীরই প্রতিনিধি । এই গল্পগ্রন্থ থেকে আমরা জানি সুদামা নদী পার হয়ে। বহলিকা, দারাদাস, বার্বারাস, চীনাস, তুষারস সহ। উদীচ্যের জনপদগুলাের কিনার থেকে কেকয়ের। রাজপ্রাসাদে আসা দাসী মন্থরার কথা। এ গল্পের বইয়ে আছেন নিভৃত মফস্বলের বিজ্ঞান শিক্ষক অনন্ত সাধন স্যার, তার মেয়ে ঈশ্বরকণা ও টেলিস্কোপ ভালবাসা এক ছাত্রের কথা । আছেন কুমিল্লার স্বদেশী আন্দোলনের দুই কিশােরী শান্তি ও সুনীতি যারা বৃটিশ ম্যাজিস্ট্রেটকে গুলি করেছিল। আছে গার্মেন্টস কারখানায় পুড়ে মরা কুমারী সিন্দারেলা বাড়ই।