"ঔপনিবেশিক আমলের বাংলা গদ্য উন্মেষ ও বিকাশের ইতিহাস" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: এ যাবৎ ধারণা ছিলো যে, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার (১৮০০) পরেই বাংলা গদ্যে গ্রন্থাদি লিখিত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক যেসব গবেষণা থেকে এই ধারণা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে, ঔপনিবেশিক আমলের বাংলা গদ্য (আমি নাম কালান্তরে বাংলা গদ্য) তার অন্যতম। কম্পেনির শাসন চালু হওয়ার পর থেকে বাংলা গদ্যে যে-বিপুল পরিমাণ রচনা লিখিত হয়, এই বইয়ে তার বিস্তারিত পরিচয় এবং সেই সঙ্গে সেসবের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ দেওয়া হয়েছে। বাংলা গদ্যে লেখা প্রথম গ্রন্থ কোনটি এবং তাতে কী লেখা ছিলো-সে পরিচয়ও বর্তমান বইয়ে প্রথম দেওয়া হয়। আগেকার গবেষণা থেকে জানা গিয়েছিলো যে, বাংলা গদ্যের সূচনা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পূর্ববর্তী; আর পুরোনো বাংলা গদ্য ছিলো পণ্ডিতী রীতির। কিন্তু বর্তমান গ্রন্থে দেখানো হয়েছে, সেই সংস্কৃতায়ন অথবা পণ্ডিতী রীতির উন্মেষ ও বিকাশ কিভাবে এবং কেন ঘটেছিলো। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের আগে প্রকাশিত উনিশটি আইনের বইয়ের রচয়িতাদের নাম জানা যায় না; এসব গ্রন্থ যে-ইংরেজ সাহেবদের তত্ত্বাবধানে রচিত হয়েছিলো, তাঁদের বিস্তারিত পরিচয়ও নয়। এই তত্ত্বাবধায়কদের, বিশেষ করে জোনাথান ডানকান এবং হেনরি পীটস ফরস্টারের, বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া হয়েছে এ গ্রন্থে।
Title
ঔপনিবেশিক আমলের বাংলা গদ্য উন্মেষ ও বিকাশের ইতিহাস
বাংলাদেশের গবেষণামূলক বই লেখকদের ক্ষেত্রে অন্যতম নাম ‘গোলাম মুরশিদ’। ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে তাঁর জানাশোনার পরিসর অত্যন্ত বিস্তৃত এবং এক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতাও উল্লেখযোগ্য। বছরের পর বছর ধরে তিনি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ রচনা করে গেছেন, তাঁর ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ বইটিতে বাঙালি সংস্কৃতি বলতে আমরা যা বুঝে থাকি এবং যা আমাদের জানার গণ্ডির বাইরে, তার সবটাকেই এক মলাটে বাঁধাই করতে পেরেছেন তিনি। ১৯৪০ সালে বরিশালে জন্ম নেন এই গবেষক ও লেখক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মজীবনে বেশ বৈচিত্র্য দেখা যায়; গবেষণার ছাড়াও বেতার সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। ১৯৮৪ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। গবেষণার মাধ্যমে অতীতকে আবিষ্কারের নেশা তাঁর প্রবল। গোলাম মুরশিদ এর বই সমগ্র পড়লে বাংলা সাহিত্যের কিছু লেখকের সমৃদ্ধ জীবনকাহিনীও জানতে পারা যায়। কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লেখা তাঁর ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত’ কিংবা মাইকেল মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে লেখা ‘আশার ছলনে ভুলি’ বইগুলো এর অন্যতম উদাহরণ। নারীপ্রগতি নিয়েও তাঁর একটি বই রয়েছে- ‘রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া’। সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন বিষয়কে একটি বিশ্লেষণাত্মক ও গবেষণামূলক ইতিহাসখণ্ডে রূপ দিতে সিদ্ধহস্ত লেখক গোলাম মুরশিদ। গোলাম মুরশিদ এর বই সমূহ শুধু যে ভাষা ও সাহিত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস নিয়েও তাঁর ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে এবং সে আগ্রহের ফসল হিসেবে বাংলাভাষী পাঠকসমাজ পেয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর একটি নির্দলীয় ইতিহাস’। এ বইয়ে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময় পরিক্রমার একটি বস্তুনিষ্ঠ ছবি তুলে ধরবার চেষ্টা করেছেন লেখক।