অন্ধকারের বৃন্ত ছিঁড়ে সে এক উজ্জ্বল সময় এসেছিল উনিশশ’ একাত্তরে।দু’চোখের আঁধি কেটে যায়।স্বপ্ন আছড়ে পড়ে বাস্তবের বালিয়াড়িতে।চৈতন্যে অবিরাম তরঙ্গ অভিঘাত ঘটে।সূর্যখোলা গ্রামের ধর্মীয় শিক্ষক শেখ মো.মুজিবুর রহমান তখন কী করেন? সাতচল্রিশে ভারত থেকে তাড়া খেয়ে আসা মানুষ তিনি।বাস করেন কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়।পাকিস্তানের পেটের ভেতর থেকে বাংলাদেশের সূচনাকাল তাঁর চেতনায় প্রবল ধাক্কা দেয়।আত্নদ্বন্ধে ক্ষতবিক্ষত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের-পড়ুয়া একমাত্র পুত্র হাফিজুর রহমানের সন্ধানে ঢাকায় গিয়ে তিনি সাতই মা্র্চের রেসকোর্সের জনসমুদ্রে নতুন প্রাণের নাগাল পান,যেনবা নদীপাড়ে ভাঙ্গন ধরে,পুরোনো বিশ্বাসে ফাটল ধরে।’মুজিবর রহমান’ নামটিও নতুন তাৎে র্যে উদ্ভাসিত হয়।গ্রামে ফিরে স্বাধীনতাকমী জনতার প্রাণের স্পন্দন উপলব্ধি করেন।জাগরণের জোয়ার টের পান।দেখতে পান-পুত্র হাফিজুর ,জামাতা সেলিম প্রবলভা্বে জড়িয়ে পড়ছে জাগরণে-আন্দোলনে।কুষ্টিয়ার প্রতিরো্ধযুদ্ধে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফর্ত অংশগ্রহণ এবং বিজয় অর্জন তাঁকে এতটাই আলোড়িত করে যে দেশত্যাগী শরনার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেই জড়িয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে।অতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট।বড়মেয়ের বাড়ি বৈদ্যনাথতলায় গিয়ে তিনি আকস্মিকভাবে সাক্ষী হয়ে পড়েন মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে।এভাবেই এ উপন্যাসে উঠে এসেছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জনপদ কুষ্টিয়া-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গার সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বের খুঁটিনাটি চালচিত্র।
রফিকুর রশীদ। জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, মেহেরপুর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৮৩ সালে সিলেটের এক চা-বাগানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। মন টেকে না সেখানে। যােগ দেন কলেজ। শিক্ষকতায়। দীর্ঘ ৩৩ বছর শিক্ষকতা শেষে মেহেরপুরের গাংনী কলেজ থেকে তিনি সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেন। নিভৃতে কাব্যচর্চা দিয়ে শুরু হলেও সত্তর দশকের শেষভাগে পত্র-পত্রিকায় গল্প লিখেই তাঁর আত্মপ্রকাশ সাহিত্যজগতে। দেশের উল্লেখযােগ্য প্রায় সব কাগজে বিরামহীন লিখে চলেছেন গল্প আর গল্প, সঙ্গে উপন্যাসও। ছােট-বড় সকলের জন্যে। নির্মোহ চরিত্র চিত্রণ এবং বর্ণনার বিশ্বস্ততাই কথাশিল্পী হিসেবে তাকে এনে দিয়েছে বিশিষ্টতা। ছােটদের জন্য লেখা গল্প এবং উপন্যাসে রফিকুর রশীদ এনেছেন বিপুল বিষয় বৈচিত্র্য। প্রিয় প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ তাে আছেই, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কৌতূহলে ভরা বিচিত্র বর্ণে বর্ণিল ছােটদের নিজস্ব ভুবনের আলােকিত উপস্থাপন ঘটে চলেছে তার লেখা শিশু ও কিশাের সাহিত্যে। স্বপ্নজয়ের কথাশিল্পী রফিকুর রশীদ এরই মাঝে অর্জন করেছেন এম. নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক মােহাম্মদ খালেদ শিশু সাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি শিশু ও সাহিত্য সম্মাননা, কাজী কাদের নওয়াজ জন্মশতবর্ষ সম্মাননা, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অরণি সাহিত্য পুরস্কার, কাঙাল হরিনাথ পদক ও পুরস্কার, বগুড়া লেখকচক্র স্বীকৃতি ও সম্মাননা, সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমি সম্মাননা, সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার, দ্বিজেন্দ্র পুরস্কার (ভরত) প্রভৃতি।