'স্বামীজি নিজে প্রতিদিন মহাপরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। প্রতিটি অভিজ্ঞতাই তাঁকে নতুন চেতনা দিয়েছে। গতকালের স্বামী বিবেকানন্দ আর আজকের স্বামী বিবেকানন্দ যেন এক নতুন মানুষ নন। বহু জাগরণ, বহু উদ্বোধন তাঁকে এক বিস্ময়কর বিশ্বচেতনা দিয়েছে। তিনি গতকাল নিজেকে যদি হিন্দু সন্ন্যাসী বলে থাকেন, তাহলে আজ তিনি সহজেই বলতে পারেন, 'আমি বৈদান্তিক সন্ন্যাসী'। নিজেকে সর্বক্ষণ ভারতমাতার সেবক বলেই জানতেন। কোনো কোনো সময় ভয়ানক জাতীয়তাবাদী মনে হতে পারে তাঁকে, আবার পর মুহূর্তেই পরমানন্দে বুঝতে হবে বিবেকানন্দ বিশ্বনাগরিক। এগুলোই আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধিতা বলতে পারেন কঠিন যুক্তিবাদী। বিবেকানন্দ বলবেন, তিনি প্রথম সত্য বা শেষ সত্য বলতে আসেননি এই পৃথিবীতে। তিনি প্রতিদিন অনুভবে চেতনায় যুক্তিতে যা সত্য বলে জেনেছেন তাই আমাদের জানিয়েছেন। এই জানার মধ্যে মানুষ প্রথম ও মানুষ শেষ কথা তাঁর জীবনে। এই মানুষকেই ভালোবেসেই তিনি বলতে পেরেছেন: 'I do not want to live in a grave-like land; I want to be a man, in a world of men.... Variation is the sign of life ... difference is the first sign... ...I pray that they (sects) may multiply so that at last there will be many sects as human being... whirlpools and eddies occur only in a rushing, living stream It is the clash of thought that wakes thought... let each have his individual method of thought in religion... this thing exists already. Each one of us is thinking in his own way, but this natural course has been obstructed all the time and is still being obstructed.' মানুষ তার নিজস্ব জগতে আগে পূর্ণতা লাভ করুক, সার্বিক চেতনায় সমৃদ্ধ হোক। তারপর সে নিজেই বিশ্বের উদ্দেশে যাত্রা করবে। ক্রমশ তার বিশ্বরূপ ফুটবে। The way to the Realisation of a Universal Religion এবং the Ideal of a Universal Religion – এই দুটি বক্তৃতায় (বক্তৃতা দুটি দিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ায়, জানুয়ারি, ১৯০০, এবং ডেট্রয়েটে, ১৮৯৬) বিবেকানন্দের বিশ্বচেতনার চূড়ান্ত প্রকাশ। হিন্দুধর্ম, সমাজ, এমনকি ভারতবর্ষ- এ-সব চিন্তা যেন তাঁকে আর তেমন করে ধরতে পারছে না। তিনি এখন ধর্মের, বেদান্তের, সব শেষে মানুষের এক চূড়ান্ত সার্বিক রূপ দেখতে পাচ্ছেন। সেই মানুষকেই বিবেকানন্দ এমন চিঠি লিখতে পারলেন। ১০ জুন ১৮৯৮, আলমোড়া থেকে নৈনিতালের মহম্মদ সরফরাজ হোসেনকে লিখছেন: 'আপনার পত্রের মর্ম বিশেষভাবে উপলব্ধি করিলাম এবং ইহা জানিয়া যারপরনাই আনন্দিত হইয়াছি যে, ভগবান সকলের অগোচরে আমাদের মাতৃভূমির জন্য অপূর্ব আয়োজন করিতেছেন।'