ভাবা যায়! ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ যে শিশুটি নতুন বই হাতে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই ছেলে কি না হাতে নিয়েছে অস্ত্র। বিপজ্জনক মুহূর্তে রাতের অর্ধেকটা একা লড়াই করে সেই যোদ্ধা। টিকতে পারেনি পাকিস্তানি বাহিনী। সেই যোদ্ধার সাহসিকতায় রক্ষা পায় এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা। সাহসিকতা ও বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পান বীরপ্রতীক খেতাব। বিশ্বের কোনো যুদ্ধে কি এমন ইতিহাস আছে- স্কুলের তিন শিক্ষার্থী বিনা অস্ত্রে সৈন্যদের চলাচলে বিঘœ ঘটায় ফেরি অচল করে দিয়ে? কতটা সাহসী হলে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে ঢুকে যেতে পারে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানোর বারতা নিয়ে! কতটা বুকের পাটা থাকলে নবম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থী প্রচ- গুলির মুখে শত্রুর বাংকারে গ্রেনেড হামলা করে ঘায়েল করে দিতে পারে শত্রু বাহিনীকে! অর্ধশতাধিক রাজাকার যখন মুক্তিবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছে, ওই অবস্থায় রাজাকার ক্যাম্পে গিয়ে কে হুংকার দিতে পারে- হ্যান্ডসআপ বলে? এরাই আমাদের বীর কিশোর-একাত্তরের মুক্তিসেনা। একাত্তরের সেই অগ্নিকিশোরদের যুদ্ধকথা নিয়েই ‘কিশোর মুক্তিযোদ্ধা সমগ্র’। গ্রন্থভুক্ত ৭৫ মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধস্মৃতিতে পাওয়া যাবে- অকল্পনীয় সাহসিকতার অনেক তথ্য।
বাংলাদেশের জন্ম ব্যথা দেখেছেন মোস্তফা হোসেইন। সেই স্মৃতি তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ সব শাখাতেই তিনি সিদ্ধহস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। কিশোর উপযোগী ‘কিশোর যোদ্ধা কৈশোরের স্মৃতি’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার। সংবর্ধিত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা ‘ঐক্য’ মাধ্যমে। মোস্তফা হোসেইন-এর জন্ম ১৯৫৫ সালের ৬ অক্টোবর মামার বাড়ি কুমিল্লা জেলার ধামতী গ্রামে। লেখাপড়া করেছেন নিজ গ্রাম একই জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা, কুমিল্লা ও ঢাকায়। গদ্যশিল্পী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক মোস্তফা হোসেইনের পেশা সাংবাদিকতা। আদর ও আদৃত’র বাবা তিনি। নূরজাহান বেগম জীবনসঙ্গিনী।