বই প্রসঙ্গে কথা হাজার বছর আগে বাংলা নামের দেশের ভেতরে যে বাঙালি জাতির সূচনা সেই জাতিকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম ও লড়াই করতে হয়েছে দীর্ঘ বছর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে এদেশের মানুষ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে। বাঙালি জাতির গৌরব মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ তাই আমাদের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। কিন্তু এই যুদ্ধের ইতিহাস ক্রমে পূর্ণতার দিকে না এগিয়ে বর্তমানে কোনাে কোনাে জােত্রে বিভ্রাত্মির শিকার। স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক টানাপড়েন এবং তথ্য সংগ্রহে যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে দীর্ঘকাল পরেও আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জাতির সামনে স্পষ্ট করতে পারিনি। আমাদের এ প্রয়াসেও যে পূর্ণতা এসেছে তা বলবাে না। কেননা শিশু-কিশােরদের উপযােগী করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার কাজটি সহজ নয়। তারপরও ৬৪ জেলার ৬৪ জন লেখক নির্বাচন করে কাজটি সম্পন্ন করতে পেরে আমরা গর্বিত। গ্রন্থমালায় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে—১. বাঙালি জাতি ও বাংলা নামের দেশ কীভাবে গড়ে উঠেছে, ২. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাঙালি ভাষা- সংগ্রাম এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, ৩. ১৯৭০-এর নির্বাচন ও তারই পরিপ্রেক্ষিতে উত্তাল মার্চের ঘটনাপ্রবাহ এবং ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ৪. ২৫ মার্চ ঢাকায় গণহত্যা ও ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘােষণার কথা। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে—প্রতিটি জেলা পর্যায়ের সংগ্রামী জনতা, বাঙালি পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রতিরােধ গড়ে তােলার পাশাপাশি ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের কথা। সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা পেয়ে যায়। আর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্যে অনেকেই কীভাবে নিজস্ব এলাকায় অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, আবার অনেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে কীভাবে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন—এ বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।
লেখক, গবেষক ও সংবাদকর্মী আইয়ুব হোসেনের জন্ম নওগাঁয়। তরুণবয়সে প্রগতিশীল ধারার রাজনীতর সঙ্গ যুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত থেকে একজন সাহসী কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। সক্রিয় ও সার্বক্ষণিকভাবে রাজনীতিতে তৎপর থাকার কারণে একাধিকবার কারাগারে অন্তরীণ থেকেছেন। পরে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেও সাম্য সমাজের স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত হননি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর পেশা হিসেবে সংবাদপত্র, বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণার সংস্থা এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে সংবাদকর্মী হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি লেখালেখি ও সামাজিক গবেষণায়ও নিবিষ্ট। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে দেশের বিশিষ্ট স্বশিক্ষিত দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের রচনাসমগ্র তিন খণ্ডে সম্পাদনা ও জীবনী রচনা। এ যাবৎ প্রকাশিত হয়েছে প্রায় সত্তরটি গ্রন্থ এবং পনেরটি গবেষণাপত্র। তিনি প্রথা ও প্রত্ম নামের দুই সন্তানের জনক।