ওঁরা এসেছিলেন, অন্তত দেড় লাখ, স্বদেশের জলমাটিহাওয়ার টানে, এক স্বরাজের ঘোরে। ওঁরা বাঙালি শরণার্থী। দেশভাগের দেশভিখারি। এসেছিলেন দণ্ডকারণ্যের অর্থাভাব অর্ধাহার, অন্যায় অবিচার, অকাল রুতা অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে, নিদেনপক্ষে বাংলার বাতাসে শেষ নিশ্বাস ফেলতে। ওঁদের আসতে বলা হয়েছিল। ওঁরা আহূত, আমন্ত্রিত। সুন্দরবনের প্রান্তিক দুর্গম দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে ওঁরা নিজেদের শ্রমে বাঁধছিলেন ঘর, গড়ছিলেন সমাজ, রচনা করছিলেন উপার্জনের ক্ষেত্র। ক্রমে হয়ে উঠছিলেন দেশবাসী। কিন্তু ওঁদের থাকতে দেওয়া হল না। উৎখাত করা হল। খেদানো হল। সরকারি বয়ানে অবশ্য ওঁরা ‘সাগ্রহে বিদায় নিয়েছেন’। ‘সাগ্রহে বিদায়ে' ওঁদের অনেকে জখম হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, ধরাধাম থেকে সাগ্রহে চিরবিদায়ও নিয়েছেন! উৎখাত করলেন কারা? যাঁরা ওঁদের ডেকে এসেছিলেন। যাঁরা ওঁদের নিয়ে বাংলায় লম্বা রাজনীতি করেছেন ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে পর্যন্ত। সরকার তার কাজ করেছে, বাংলার মানুষ কী করেছিল? দেশহারা বাঙালির আকাঙ্ক্ষাকে স্পষ্টত অনাদর অবহেলা দেখিয়েছিল দেশাভিমানী বাঙালি। কেন অনাদর? কারণ ওঁরা প্রান্তজন, ছোটলোক । সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘ঘুঁটেকুডুনির ছানা’। ‘এ-দুয়োরে যায়: দূর-দূর!/ ও-দুয়োরে যায়: ছেই ছেই ।