প্রকাশকের বক্তব্য বর্তমান গ্রন্থ একজন নাস্তিকের আস্তিক হবার বিচিত্র কাহিনী। এই জন্য এ গ্রন্থের প্রথম ভাগ আমাদের প্রচলিত সমাজ ও ধর্মব্যবস্থার বিরুদ্ধে আক্রমণ দিয়ে শুরু। বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত অবশ্য সনাতন হিন্দু ধর্মের নিকট আত্মসমর্পণ সেইজন্য পাঠকের প্রতি আবেদন, তাঁরা যেন এ গ্রন্থের প্রাথমিক অংশ দেখে লেখকের মানসিকতাকে কালাপাহাড়ী বলে ভাববেন না। বেদ, উপনিষৎ, ষড়দর্শন, মায় গীতা চণ্ডী পর্যন্ত আমাদের যতসব ধর্মগ্রন্থ রয়েছে, এই ধর্মগ্রন্থগুলির যথার্থ মূল্য যাচাই করবার প্রত্যক্ষ পথ একটিই আছে, যার নাম যোগ। সমগ্র সৃষ্টির মূল রহস্য এই দেহের মধ্যেই আছে বলে যোগীদের ধারণা। এই জন্য দেহকে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পরম এক অদ্বৈত থেকে অব্যক্ত রহস্যে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি। অদ্বৈতের গুণ বা শক্তি থেকেই এই সৃষ্টি। সেই শক্তি বস্তুজগতের মৌল উপাদান সৃষ্টি করার পর বস্তুর মধ্যে নিষ্ক্রিয় হয়ে ঘুমিয়ে আছে। এই শক্তি বৃত্তকাশক্তি নামে তন্ত্রে পরিচিত। মানুষের দেহের মধ্যে মূলাধারে এই শক্তি সূক্ষ্ম লিঙ্গকে বেষ্টন করে কুণ্ডলিনী শক্তি হিসেবে ঘুমন্ত থাকে। যোগের সাহায্যে সেই শক্তিকে জাগরিত করে দেহের অভ্যন্তরস্থ ছয়টি চক্রকে ভেদ করে মস্তিষ্কের ব্রহ্মরন্ধ্রের দিকে ঠেলে দিতে পারলে অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতা হয়। মানুষ সৃষ্টি-রহস্যের সমস্ত গোপন খবর জানতে পারে। বর্তমান গ্রন্থের লেখক অদ্ভুত ভাবে সেই ভারতীয় যোগ সাধনার সঙ্গে পরিচিত হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে যোগ সাধনায় তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতার কথা অর্থাৎ কুণ্ডলিনী শক্তির ঊর্ধ্বগতির ফলে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয় তার কথা তিনি বর্তমান গ্রন্থে ব্যক্ত করেছেন। গুহ্যবিদ্যা হিসেবে এ বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা এ যাবৎকাল সাধকেরা কিছুটা গোপন রেখে ব্যক্ত করতেন। সরাসরি এ অভিজ্ঞতার কথা কখনও বলতেন না। কিন্তু বর্তমান গ্রন্থের লেখক স্পষ্ট এবং সহজ ভাষায় কিছু গোপন না রেখে সরাসরি তা প্রকাশ করেছেন। লেখক মূলতঃ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, এবং আধুনিক শিল্প কৌশলের সঙ্গে সুপরিচিত। আধুনিক লেখক হিসেবেই মূলতঃ তিনি প্রতিষ্ঠিত। তাঁর সেই আধুনিক শিল্পীসুলভ কুশলতার সঙ্গে তিনি ভারতীয় অধ্যাত্মতত্ত্বের এক দুরূহ অংশকে সুললিতভাবে বর্ণনা করেছেন। ফলে বর্তমান গ্রন্থটি তত্ত্ব ও তথ্যের সঙ্গে সুললিত শিল্পের সংমিশ্রণে এক অনবদ্য উপহার হিসেবে পাঠকের কাছে উপস্থিত হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। এই গ্রন্থের ভ্রমণ অংশের অনেকখানিই লেখকের পূর্ববর্তী একটি ভ্রমণোপন্যাস থেকে নেওয়া। বর্তমান গ্রন্থটি যদি সনাতন হিন্দুধর্মের সত্যরূপ প্রকাশে বিন্দুমাত্রও সহায়ক হয়, আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক বলে বিবেচিত হবে।