এক আত্মা সম্পর্কে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ, যাযাবর ও বর্বরদের চিন্তা পশু-জগতের সর্বত্রই বোধহয় মৃত্যু সম্পর্কে একটা চিন্তা বা ভাবনা আছে। আমাদের চার পাশের কুকুর, বেড়াল, গরু, ভেড়া ইত্যাদির দিকে যদি তাকিয়ে দেখা যায়, একটুখানি তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে, তাদের মধ্যে সমপ্রজাতির কেউ মারা গেলে তারা তাকে কেমন শুঁকে শুঁকে বুঝবার চেষ্টা করে। তারপর তাদের চোখে মুখে কেমন একটা বিমর্ষ ভাব ফুটে ওঠে। পশুপাখিদের প্রাণ আছে, কিন্তু মানসিক বিকাশ তেমন নয় বলেই আমাদের ধারণা। তার ফলে চিন্তা ভাবনা তারা তেমন করতে পারে না বলে মনে হয় । কিন্তু যথার্থই তারা চিন্তা ভাবনা করতে পারে কিনা এ-কথা আমরা যে খুব একটা ভেবে দেখেছি তা নয়। পশুপাখি এরা সবাই ভালবাসার প্রতিদান দিতে পারে। কে তার শত্রু, কে মিত্র বুঝতে পারে। অনেক পশুপাখির মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তির যথেষ্টই বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। সুতরাং তাদের সমপ্রজাতির কেউ মারা গেলে তাদের চিন্তাতরঙ্গে কি ধরণের সাড়া জাগে তা আমরা তেমন ভাবে পরীক্ষা করে দেখিনি। ফাঁদ পাতলে ইঁদুর বেড়ালও তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে । দু-একবার ধরা পড়লেও পরে দেখা যায়—ফাঁদ এড়িয়ে চলছে। একটুখানি চিন্তা ভাবনা কাজে না লাগালে এমন হতে পারেনা। ইদানীং গাছগাছালি, এমন কি জড়বস্তুর মধ্যেও মন নামক জিনিষের সন্ধান পাওয়া গেছে। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুই এ-ক্ষেত্রে প্রমাণ দিয়ে গেছেন। সেই প্রমাণের সূত্র ধরে এখন বিজ্ঞানীরা এমন খবর পেয়েছেন যে, তাদের এখন শুধু একেন্দ্রিয় বিশিষ্ট বলে কেউ মনে করেন না। তাদের সঙ্গে ভাবের আদান প্রদান পর্যন্ত মানুষ করতে আরম্ভ করেছে। গাছের ইন্দ্রিয়ের সংখ্যা মানুষের ইন্দ্রিয়ের সংখ্যার চাইতে অনেক নাকি বেশি। মহাবিশ্বজাগতিক বহু ঘটনার তারা সাড়া পায়। পশুপাখিরা ঋতু পরিবর্তনের খবর আমাদের আগেই পেয়ে যায়। এদের মধ্যে যে Precognition জাতীয় অনুভূতি আছে আমাদের মধ্যে তা নেই। এখনও আমরা বৃষ্টির সময় যথার্থ নির্ণয় করতে পারি না। কিন্তু পিঁপড়েরা বর্ষার সংকেত অনেক আগে পেয়েই সাবধান হয়ে যায়। ডিম মুখে তুলে নিরাপদ স্থানে যাবার চেষ্টা করে। একটা পিঁপড়ে মারা গেলে যুথবদ্ধ পিঁপড়ের দল একটু থমকে দাঁড়িয়ে বিচার করে। সুতরাং মানসবৃত্তি তাদের নেই, তারা চিন্তাভাবনা করতে পারে না, এমন ভাববার যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ নেই। জীবন এবং মৃত্যু নিয়ে তারাও হয়তো ভাবে, আমরা জানতে পারি না এই যা ।