"ইসলামের দৃষ্টিতে পোশাক পর্দা ও সাজসজ্জা" বইটির 'পেশ কালাম' অংশ থেকে নেয়াঃ পােশাক মানব জাতির একটি মৌলিক প্রয়ােজন। লজ্জাস্থান আবৃত করা ছাড়াও এর সাহায্যে শীত ও গ্রীষ্মের ঋতুগত প্রভাব থেকে দেহকে নিরাপদ রাখা যায়। তদুপরি দেহের শােভা বর্ধনের উপায় হিসেবেও এটা ব্যবহার করা হয়। সৃষ্টির প্রথম মানুষ থেকে শুরু করে আজকের পৃথিবীর সকল সভ্য মানুষ পােশাক পরিধান করে আসছে। এর মাধ্যমে ব্যক্তির পছন্দ, ব্যক্তিত্ব, মন-মানসিকতা ও বিশ্বাস প্রভৃতি প্রকাশ পায়। পােশাক নিয়ে আমাদের দেশে বর্তমানে ঐতিহ্যবাদী ইসলামী শিক্ষিত ও আধুনিক ধ্যানধারণায় পুষ্ট সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে। বিশেষ করে এ দেশের ‘উলামা-মাশাইখ ইসলামের অনুসারীদের জন্য পােশাক-পরিচ্ছদের একটি প্যাটার্ন ঠিক করে দিতে চান। অপর দিকে আধুনিক শিক্ষিতরা তা মেনে নিতে রাজী নন। বস্তুত ইসলামী শারী'আত মু'মিন পুরুষ ও নারীর জন্য কোন পােশাক নির্দিষ্ট করে দেয় নি। সাতর ঢাকার জন্য কতকগুলাে শর্ত ও সীমারেখা দিয়ে দিয়েছে। এগুলাে মেনে চলে দেশ, কাল, পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুযায়ী এক বিস্তৃত আওতা পর্যন্ত যে কোন পােশাকই ইসলামে জায়িয। পােশাক প্রশ্নে অজ্ঞতা, চাপানাে বুজরুকি ও অন্ধ অনুকরণ ইত্যাদির বাইরে গিয়ে কেবল শারী'আতের সীমায় থাকা এবং এর প্রশস্ত দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করাই সমগ্র পৃথিবীর মুসলিমদের কর্তব্য। সাজসজ্জাও পােশাকের মতাে মানুষের স্বভাবগত চাহিদা। স্বভাবগত দীন হিসেবে একজন মানুষের এ চাহিদার ব্যাপারেও ইসলামের রয়েছে স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি। তবে এ দৃষ্টিভঙ্গিতে কূপমণ্ডুকতা কিংবা উগ্রতার কোনই সুযােগ নেই। জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতাে সাজসজ্জার ক্ষেত্রেও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নিতান্তই সুদূরপ্রসারী এবং মানবকল্যাণের চিরন্তন লক্ষ্যাভিসারী। ইসলামে সাধারণত সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য সামগ্রীর ব্যবহার বৈধ ও কাম্য; ক্ষেত্রবিশেষে মুস্তাহাব ও ওয়াজিবও বটে। তবে অবশ্যই এ ক্ষেত্রে শারী'আত প্রদত্ত সীমারেখার মধ্যে অবস্থান করতে হবে। এ গ্রন্থে আমি পবিত্র কুর’আন, হাদীস ও বিভিন্ন প্রামাণ্য গ্রন্থের আলােকে পােশাক ও সাজসজ্জার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যপূর্ণ আলােচনা করতে চেষ্টা করেছি।
ড, আহমদ আলী ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার লােহাগাড়া উপজেলাধীন পশ্চিম কলাউজান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনের শুরু থেকে প্রতিটি স্তরে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে বি.এ. (অনার্স) ও মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনসহ পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর সৌদি আরবের রিয়াদস্থ কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি থেকে আরবি ভাষার শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর উচ্চতর ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি চুনতী হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসা, চট্টগ্রাম-এর মুহাদ্দিস ও উপাধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যােগদান করেন। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রফেসর হিসেবে নিয়ােজিত আছেন এবং বাংলাদেশ ইসলামিক ল' রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা। থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক গবেষণা পত্রিকা ‘ইসলামী আইন ও বিচার'-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।
তিনি দেশেবিদেশে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে গবেষণাপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ইতােমধ্যে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁর 'ষােলটি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলাে- খলীফাতু রাসূলিল্লাহ আবু বাকর আস-সিদ্দীক (রা.), বিদ'আত (১ম-৪র্থ খণ্ড), মুসলিম লিপিকলা: উৎপত্তি ও বিকাশ, আধুনিক আরবী কাব্যের ইতিহাস ১ম খণ্ড, ইসলামের শাস্তি আইন, তাযকিয়াতুন নাফস (আত্মশুদ্ধি), ইসমাতুল আম্বিয়া, ইসলামে বাসস্থানের অধিকার ও নিরাপত্তা, ইসলামের দৃষ্টিতে পােশাক, পর্দা ও সাজসজ্জা, সার্বভৌমত্ব: ইসলামী দৃষ্টিকোণ, গণতন্ত্র ও ইসলাম। তাছাড়া আরবি ভাষা ও সাহিত্য, লিপিকলা, ইসলামের ইতিহাস, জীবনদর্শন, আইন ও সমাজ ব্যবস্থার ওপর তার নানা বিষয়ে লিখিত পঞ্চাশােধিক গবেষণাপ্রবন্ধ দেশবিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।