১৯৪২-৪৩-এ তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির বাংলা কমিটির মুখপত্র ‘জনযুদ্ধে’ প্রথম গদ্য লিখতে শুরু করেছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়, তাঁর প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন সোমনাথ লাহিড়ী। পরে তাঁর বন্ধু দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সেইসব সংবাদ নিবন্ধের কয়েকটিকে তাঁদের কিশোর- পত্রিকা ‘রংমশাল’-এর জন্যে ঢেলে লিখিয়ে নিয়েছিলেন ‘আমার বাংলা' পর্যায়ে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম গদ্যগ্রন্থ ‘আমার বাংলা'-র সূত্রপাত এইভাবেই। ঈগল পাবলিশার্স থেকে ১৯৫১-তে প্রকাশিত সেই গদ্যগ্রন্থের ভূমিকায় যে-পদাতিকতায় তাঁকে ভূষিত করেছিলেন নীহাররঞ্জন রায় তারই অনুবর্তন ঘটে গিয়েছে এর পরের তিন দশক জুড়ে—কেবলই তাঁর বাংলা ছুঁড়ে বেড়িয়েছেন 'সুভাষ মুখোপাধ্যায়, পশ্চিম থেকে পুবে, দক্ষিণ থেকে উত্তরে, দেখেছেন বাংলার মানুষজনকে তাদের দুঃখেসুখে তাদের সংগ্রামে। দেখেছেন, শুনেছেন আর ক্রমান্বয়ে লিখে গিয়েছেন তাঁর সেই বঙ্গদর্শনের অভিজ্ঞতা দৈনিকে সাপ্তাহিকে-মাসিকে-ত্রৈমাসিকে। সেইসব রচনারই ক্রমিক সঙ্কলন ‘আমার বাংলা' (১৯৫১), 'যখন যেখানে' (১৯৬০), ‘ডাকবাংলার ডায়েরি’ (১৯৬৫), ‘নারদের ডায়েরি' (১৯৬৯), ‘ক্ষমা নেই' (১৯৭২), ‘আবার ডাক বাংলার ডাকে (১৯৮১) সঙ্কলিত হয়েছে গদ্যসংগ্রহ প্রথম খণ্ডে। সুভাষ মুখোপাধ্যায় নিজেই যার নাম রেখেছেন ‘বাংলা আমার বাংলা।'
Title
গদ্য সংগ্রহ ২ (সমগ্র সাহিত্য রচনার জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার)
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য বাঙালি কবি ও গদ্যকার। কবিতা তাঁর প্রধান সাহিত্যক্ষেত্র হলেও ছড়া, রিপোর্টাজ, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, বিদেশি গ্রন্থের অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য সকল প্রকার রচনাতেই তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য। পরিণত বয়সে গায়ে খদ্দরের পাঞ্জাবি, পরনে সাদা পায়জামা, মাথাভর্তি ঘন কোঁকড়ানো চুল, বুদ্ধিদীপ্ত ঝকঝকে চোখ, চোখে চশমা, বামে চশমার নিচে বড় একটা আঁচিল - কলকাতার প্রতিবেশে এরকম একটি প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিলেন তিনি।