লেখকের কথা ‘নেতা চাই নেতা’ একটি অন্য ধরনের বই। গণতান্ত্রিক দেশে আমরা সবাই ভোট দিয়ে থাকি। ভোট যখন দিই তখন আমরা চাই বা না চাই আমাদেরকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হয়। আমরাও দেশের এক বৃহৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে পড়ি। আর সেজন্যই নেতৃত্বের স্বরূপ, দেশ-বিদেশের নেতাদের পতন অভ্যুদয়ের কথা, রাজনৈতিক পরিবর্তনে জনগণের ভূমিকার কথা অনিবার্যভাবে এসে পড়ে। সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক শিক্ষারও দরকার হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ যদি রাজনীতি সম্পর্কে ক্রমশ অনাগ্রহী হয়ে পড়েন তাহলে দেশে কখনও ভাল সরকার আসতে পারে না কারণ জনসাধারণ যে সরকারের যোগ্য, সেই সরকারই পায়। এই কথাগুলি মাথায় রেখেই নেতা চাই নেতা বইটি লেখা শুরু করি। আমি একদা ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু যেদিন সাংবাদিকতায় যোগ দিই সেদিনই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সংস্রব ত্যাগ করি। তারপর বহু রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে প্রেশার সূত্রে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছি কিন্তু কখনও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হইনি। তবে আমার নিজস্ব রাজনৈতিক ভাবনা ও চিন্তা চিরকালই রয়ে গিয়েছে। সমাজ সৃষ্টিতে সক্ষম তেমন ভাবনা-চিন্তার কথাও এই বইতে লিখেছি। তবে তার জন্য চাই একজন যোগ্য নেতা। সেই নেতার সন্ধানেই আমার সুদীর্ঘ অন্বেষা । যদিও আমি বিশ্বাস করি ব্যক্তিমানুষের সার্বিক উন্নয়ন ছাড়া সমাজ দেশ তথা রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সুস্থ পারিবারিক ও সামাজিক বাতাবরণ সুনাগরিক গড়ারও অন্যতম শর্ত। মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশেই মুক্ত গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণার সৃষ্টি হতে পারে। একজন নেতা একটি সুস্থ শক্তিশালী সমাজ গড়ে তুলতে পারেন। তাই চরিত্রবান ভুয়োদর্শী নেতার আজ দেশের বড় প্রয়োজন। “নেতা চাই নেতা’য় উল্লিখিত যাবতীয় তথ্য সংবাদপত্র, সাময়িকপত্র বিভিন্ন রেফারেন্স গ্রন্থ ও আমার ৫০ বছরের সাংবাদিকতার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া। আমি নতুন কিছু বলার চেষ্টা করিনি, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ঘটনার বিশ্লেষণ করেছি মাত্র।
ড. পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা গ্রামে। ১৯৫৯ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে তিনি মাত্র ত্রিশ টাকা সম্বল করে কলকাতায় এসে সংবাদপত্র যোগ দেন। সাংবাদিকতার চাকরির সঙ্গে সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চলতে থাকে। তারপর হঠাৎই কমনওয়েলথ সাংবাদিক বৃত্তি পেয়ে ব্রিটেনে চলে যান সংবাদপত্র সম্পর্কে হাতে-কলমে পাঠ নিতে। ১৯৬১ তে দেশে ফিরে এক নাগাড়ে চারটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন ৩৭ বছর ধরে। বেশির ভাগ সময় ছিলেন আনন্দ বাজারে। চার বছর ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৮ সালে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যক্ষ ও ডিনের পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে অবসর নিয়ে এখন সর্বসময়ের লেখক। সারা প্রথিবী ঘুরেছেন বহুবার। বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে পান আন্তর্জাতিক জেফারসন ফেলোশিপ। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ছিলেন বেশ কিছুকাল। বই এর সংখ্যা ৮৮। গল্প উপন্যাস, ভ্রমণ, প্রবন্ধ। এখন বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন জীবনবাদী বই লেখায় আর যুব ও ছাত্রদের মধ্যে মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য তৈরি করেছেন সিপডাভে নামে একটি প্রতিষ্ঠান।