“শ্রেষ্ঠ কবিতা" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ কবিতার ইতিহাসে বাংলা ভাষায় কবি সমর সেন একজন ভিন্নমাত্রিক শিল্পী, স্বতন্ত্র স্বর। মননে তিনি একাধারে মার্কসবাদী অন্যদিকে মধ্যবিত্তের নাগরিক সত্তার ধারক। নিপীড়িত তৃণমূল মানুষের জীবনযন্ত্রণার বাস্তবতা আর । কল্যানকামী সত্য-সুন্দরের আকাঙ্ক্ষী মানুষের স্বপ্নে যে বিস্তর ফারাক তা তার কবিতার প্রতি ছত্রে ছত্রে প্রতিফলিত। প্রান্তিক মানুষের জীবন প্রতিনিয়ত অন্যায়, অকল্যাণ, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত আর অত্যাচারের মুখােমুখি হয়। এমন প্রতিকূল পরিবেশ-প্রতিবেশে পিষ্ট আর্তমানবতার মনােসামাজিক জীবন্ত দলিল তাঁর কবিতাগুচ্ছ। মানবতার মুক্তি কাজ্ঞায় রক্তাক্ত ছিন্ন-ভিন্ন এক কবিআত্মাকে আমরা আবিষ্কার করি আর্থ-সামাজিক দুরাচারে শৃঙ্খলাবদ্ধ অবনমিত কাব্যিক প্রেক্ষাপটে। তাঁর কবিতায় অন্ধকার সাঁতরে উজানে যাওয়ার অনপনেয় তৃষ্ণাকুল যাতনা আমরা অনুভব করি। । কবিতায় ছােট ছােট পংক্তিতে জাবত চিত্রকল্পের অনুপম ব্যক্তিগত স্টাইল সমর সেন ব্যবহার করেছেন। যে কাব্যরীতি সহজেই অন্যের থেকে পৃথক করা যায়। তবে মার্কসবাদী সাম্যবাদী তথাকথিত শ্লোগান তিনি কবিতায় সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে গেছেন। কবিতার মধ্যেই নিষ্পিষ্ট মানুষের বেদনার অভিঘাত প্ৰক্ষ্ম থাকায় একদিকে যেমন তার শিল্পচর্চা অক্ষুন্ন রয়েছে, অন্যদিকে হৃদয়ে ধারন করা মানবিকতাকে তিনি সহজেই প্রকাশ করতে পেরেছেন। সুনামলিলু কিন্তু কর্মবিমুখ সুখী বাঙালি উচ্চমধ্যবিত্ত অনেক কবিতায়ই স্বরূপে অথবা রূপকে স্থান পেয়েছে। সমর সেনের কবিতা শুধু সাংবাদিকের দিনলিপি নয়। নয় শুধু দুঃখের তত্ত্বতালাশ। তাঁর কবিতার মূল সুর মানবাত্মার মুক্তিসন্ধান। আর্থ-সামাজিকমনােদৈহিক নিগড়ে বন্দী সাধারণ মানুষের আত্মিক মুক্তির কামনা তার। কবিতার মূল প্রণােদনা। যুগ যুগ ধরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কঠোর নিষ্পেষণে পিষ্ট মানুষের মর্মযাতনা এবং এ থেকে উত্তরণের প্রয়াস- তাঁর কবিতায় মৌলিকভাবেই শিল্পস্বার্থক হয়ে উঠেছে।