নৈশ বাতাসে স্বর্ণ চাপার সুবাস, বেহালার ছড়ে করুণ সুর। মেয়েদের ফিরিঙ্গি খোঁপা, তবে এসবই পর্তুগীজদের অবদান। আর ইংরেজরা এদেশের মাটিতে পা রাখল অনেক পরে। সেটা ১৬৯০ সালের ২৯ আগস্ট (কারো মতে ওটা ২৪ হবে) কলকাতার জন্ম হল এক রৌদ্র করোজ্জ্বল দ্বিপ্রহরে। জব চার্নক এসে তার পালতোলা জাহাজ ভিড়ালেন সুতানুটিতে। পরে সাবর্ণ চৌধুরীদের কাছ থেকে সুতানুটি, কলকাতা আর গোবিন্দপুর, এই তিনটি গ্রাম ইংরেজরা কিনে নেয় মাত্র তের'শ টাকার বিনিময়ে। তবে এরজন্য তখনকার বাংলার শাসনকর্তা আজিম উসসান কিংবা আজিম ওসমানকে নজরানা দিতে হয়েছিল ষোল হাজার টাকা। সফল দৌত্য করেন খোজা সরহদ নামে একজন নামী আরমেনিয়ান। বৌবাজারের কাছে তখন ছিল একটা বটগাছ। তারই ছায়ায় বসে জব চার্নক গড়গড়ায় ভুড়ুক ভুড়ুক তামাক খেতেন আর হাটের ব্যাপারীদের সঙ্গে সুতোর দরদাম করতেন। কারো মতে ওটা বটগাছ নয়, নিমগাছ। তার থেকেই নাম নিমতলা। তখন বেলেঘাটা অঞ্চলে রাস্তায় তেলবাতির আলো জ্বলত । রাত নটার পর তা নিভিয়ে দেওয়া হত। গ্রীকদের একটা সমাধিস্থল ছিল। সঙ্গে ফুলের বাগান। সেই থেকে জায়গাটার নাম ফুলবাগান। কাঁকুড়গাছির পাশে রিজিয়া নার্শারি। সন্ধ্যের পর বাঈজীর নাচ-গান শুরু হত। কানে আতর গুঁজে ল্যান্ডো হাঁকিয়ে আসত বড়লোক-জমিদার। এই উপন্যাসে অনেক চরিত্র। বুড়ো ফকির দাস, হিরালাল, রতীশ, হিয়া, চামেলী, রঘুনন্দন, কোনা ঘোষ অজস্র মানুষের এক বর্ণাঢ্য মিছিল। তবে সেটা অন্য কলকাতা, এখন আর এক কলকাতা। উড়ালপুল, তেফলা বাতি, বিদ্যাসাগর সেতু, সল্টলেক, নিউ-টাউন। নিত্য খুন-জখম, সঙ্গে তোলাবাজি। ক্রমবর্ধমান অভাব-অনটন। কেউ বলে কলকাতা নাকি বদলাচ্ছে। সত্যি কি তাই ?
Debol Debborma ভন্ম ওড়িশার ঝাড়সুগদায় মাতামহের বাসস্থলে। পিতা চণ্ডীচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ছিল বদলির চাকরি। সেই সুবাদে শৈশব-কৈশাের কেটেছে দূর মফঃস্বলের স্থান থেকে স্থানান্তরে। মেদিনীপুরের পাঁচটি স্কুলে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়া। সালকিয়া অ্যাংলাে-সংস্কৃতি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন। বেলুড় ও বাঁকুড়ায় আই. এস-সি.। বাঁকুড়া ক্রিশ্চান কলেজ থেকে স্নাতক। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। কর্মজীবনের সূচনায় স্কুল-মাস্টারি। মফঃস্বল এবং কলকাতার স্কুলে। মাস কয়েক এ. জি. বেঙ্গলের চাকরি। তারপর ড. বি. সি. এস. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাণিজ্যকর আধিকারিক সহকারী কমিশনার হওয়ার পর অবসর। বর্তমান নিবাস সল্ট লেকে। কলেজ জীবন থেকেই সাহিত্যরচনায় ঝোক। প্রবাসী আয়ােজিত এক গল্প। প্রতিযােগিতায় জীবনের প্রথম বড়দের গল্প। সেই গল্পে বিশেষ পুরস্কারের সম্মান। এরপর থেকে নিয়মিত লেখালেখি। প্রথম অজিত চট্টোপাধ্যায় এই স্বনামে, পরে দেবল দেববর্মা ছদ্মনামে। প্রকাশিত গ্রন্থ প্রায় ৬০ এর অধিক। বেতারে-দূরদর্শনে একাধিক কাহিনির সম্প্রচার, নাটক সিরিয়াল রূপে। পছন্দ দূরভ্রমণ, সবুজ রঙ।