বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধকে সহজেই বাংলা কথাসাহিত্যের সুবর্ণযুগ বলা যেতে পারে। বিচিত্র প্রতিভাধর লেখকরা এই সময় বঙ্গজননীকে যেসব দুর্লভ মণিমুক্তা নতমস্তকে উপহার দিয়েছেন তা আজও তুলনাহীন । স্মরণীয় এই সময়েই সাহিত্যজগতে শংকর-এর প্রবেশ এবং ক্লান্তিহীন সাধনায় বিপুল স্বীকৃতি লাভ। শংকর-এর জন্ম ৭ ডিসেম্বর ১৯৩৩—পথের পাঁচালীর দেশ বনগ্রামে। নিতান্ত বাল্যবয়সে ভাগীরথী নদীর পশ্চিমপারে হাওড়ায় চলে আসা এবং সেখানেই বিস্ময়কর পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা। পিতৃদেবের অকালমৃত্যুর পরে ভাগ্যসন্ধানে বেরিয়ে একসময় হাইকোর্টের আদালতী কর্মক্ষেত্রে এদেশের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার নোয়েল ফ্রেডরিক বারওয়েলের সঙ্গে নিবিড় পরিচয়। অদ্ভুত এই অভিজ্ঞতা থেকেই প্রথম বই ‘কত অজানারে'-র সৃষ্টি, যা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দুই বাংলার হৃদয় হরণ করে। তারপর একের পর এক সাহিত্য বিস্ময়, যা একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসেও অব্যাহত। শরৎচন্দ্রের পরে আর কোনো বাঙালি লেখক, স্মরণীয়কালের মধ্যে এমন বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। তিনটি তুলনাহীন নগর উপন্যাস নিয়েই এবারের এই কথা-সাগর ‘কাজ’,‘এবিসিডি লিমিটেড’ও ‘মানসম্মান' শংকরসাহিত্যের এই ত্রয়ী নিদর্শন যে সহজেই পাঠক-পাঠিকাদের হৃদয় জয় করবে এ-বিষয়ে আমাদের কেনো সন্দেহ নেই ।
শংকর একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তাঁর আসল নাম মণিশংকর মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল চৌরঙ্গী, সীমাবদ্ধ এবং জন অরণ্য। এই তিনটি বই নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। ২০১৬ সালে তিনি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট সম্মানে ভূষিত হন।