‘সম্রাট ও সুন্দরী’ বইয়ের কিছু অংশঃ অর্বাচীন সমকালের উদ্ধত ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে নগর কলকাতার উত্তরাঞ্চলে যে সব বিগতযৌবনা রঙ্গশালা বর্ষীয়সী নটী বিনোদিনীর মতো বিষণ্ণ বদনে রাজপথের উদাসীন জনস্রোতের দিকে আপন মনে তাকিয়ে আছে তারই কোথাও এই কাহিনীর শুরু। শুরুর আগে প্রণাম জানাই নাট্যমঞ্চের জাগ্রতদেবতা শ্রীশ্রীঠাকুর পরমহংসদেবকে। মানবিক পদধূলি গ্রহণ করি বঙ্গরঙ্গমঞ্চের পরমপুরুষ মহাকবি গিরিশচন্দ্র ঘোষের। এইভাবেই প্রতিদিন অপরাহ্নে দৈনন্দিন জীবন শুরু করেন আমাদের এই কাহিনীর অন্যতম চরিত্র শ্রীবীরেশ্বর রক্ষিত। প্রাতঃস্মরণীয় দুজন পুরুষের পাদপদ্মে দুটি সুগন্ধি ধূপ নিজের হাতে জ্বালিয়ে দেওয়ার পরে বাহান্ন বছরের বীরেশ্বর রক্ষিত কোহিনূর থিয়েটারের দোতলায় নিজের অফিস-ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে যে-কান্ডটি করেন তা এই থিয়েটারের অফিস-ম্যানেজার নরহরি এবং বেয়ারা অর্জুন ছাড়া আজ পর্যন্ত কেউ নিজের চোখে দেখেনি। আড়াল থেকে দৃশ্যটা আবার দেখবার লোভে অর্জুন বেয়ারা আজও তৈরি হয়ে আছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সায়েবের দেখা নেই। খোদ বীরেশ্বরকেই এবার আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করছি। তিনি এখন একটা সবুজ রঙের অ্যামব্যাসাডর গাড়ির মধ্যে বসে আছেন। বীরেশ্বর রক্ষিত-নাদুসনুদুস চেহারা, গায়ের রং উজ্জ্বল গৌর, কাকাতুয়ার মতো তীক্ষ খাড়া নাক, কিন্তু গোলগাল চোখদুটো দেহের সাইজের তুলনায় একটু ছোট। উচ্চতা পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। ঠোঁটজোড়াও নজরে পড়বার মতো, তবে নিচের ঠোঁটটা অনেক বেশি পুরু। শরীরের ওজন বিরাশি কেজি—গত পনেরো বছর ধরে নিয়মিতভাবে বছরে এক কেজি ওজন বাড়ছে বীরেশ্বরের। কিন্তু তা বলে কোনোরকম বেয়াড়া রোগের অধিকারী নন বীরেশ্বর। শরীরের রক্ত ও রক্তচাপ তিনি নিয়মিত পরীক্ষা করিয়ে যাচ্ছেন। বীরেশ্বরের মোটরগাড়ি মন্থরগতিতে বিশ্বরূপা, রঙমহল থিয়েটার পেরিয়ে একটা পুরনো ট্রামের পিছন-পিছন কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীট ধরে শহরের উত্তর দিকে এগিয়ে চলেছে। গাড়ির ভিতর অনেকক্ষণ শালগ্রামশিলার মতো হাত-পা গুটিয়ে…..
শংকর একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তাঁর আসল নাম মণিশংকর মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল চৌরঙ্গী, সীমাবদ্ধ এবং জন অরণ্য। এই তিনটি বই নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। ২০১৬ সালে তিনি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট সম্মানে ভূষিত হন।