মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে সুতীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ হাজির করেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। বলেছেন, মধ্যবিত্ত হলো দেশবাসীর প্রতি ঔপনিবেশিক শক্তির দেওয়া উপহার । উপনিবেশের মানুষ একটু ছোটই হয়। নিজেদের অসাধারণ মেধা ও প্রতিভা এবং সংকল্প ও শ্রম দিয়ে হাতে গোনা যায় এমন কয়েকজন মানুষ কোনো-কোনো ক্ষেত্রে খুব উঁচু মাপের ব্যক্তিত্বে উন্নীত হন, কিন্তু এঁরা বড় হয়েছেন ব্যক্তির মাপকে ছাড়িয়ে, এঁদের দিয়ে মধ্যবিত্ত মানুষকে চিনতে যাওয়া কেবল অসমীচীন নয়, অসম্ভবও বটে।...ভক্তি ও বিশ্বাসের সংস্কার ও মূল্যবোধ, সাধ ও সংকল্প এবং উত্তেজনা ও প্রেরণার জবড়জঙ উর্দি তুলে নাবালক ও বামন এবং পঙ্গু ও রুগ্ন ঐ মধ্যবিত্তকে পরিচয় করে দেওয়ার কাজটি হাতে নিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লিখেছেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দারিদ্র্যের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াই করতে হয়েছে সারা জীবন । লড়াই করতে হয়েছে এই কারণেই যে, তিনি সৎ লেখক ছিলেন। আর অশোক মিত্র বললেন, ছাব্বিশ বছর বয়সের এক যুবক নির্লিপ্ত গদ্যে, আপাতনিরুত্তাপ আবেগে, অবৈকল্যসিদ্ধ বুদ্ধিতে যে-রচনায়, কীসের তাগিদে কে জানে, হাত দিয়েছিলেন, বাংলা ভাষার সাতশো বছরের শিলাঙ্কিত ইতিহাসে তার তুলনা নেই। হাসান আজিজুল হকের মন্তব্য—মানিকের সমস্ত সাহিত্য সামনে রেখে এই প্রশ্নের এখন একটিই স্পষ্ট ও দৃঢ় জবাব দেওয়া যায় তিনি শুধু বাস্তববাদী লেখক নন, কট্টর বাস্তববাদী লেখক। এই গ্রন্থের একেকটি লেখায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষুরধার লেখনী, তাঁর জীবন ও ব্যক্তিসত্তা নিয়ে এমনই মর্মস্পর্শী, তীক্ষ্ণোজ্জ্বল আলোচনা করেছেন বিশিষ্টরা। মানিক-অনুসন্ধিৎসু মননশীল পাঠককে তৃপ্ত করতে পারলেই এই গ্রন্থের সার্থকতা।
ঘনশ্যাম চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সালের ১লা অক্টোবর। কলকাতায় জন্ম হলেও শৈশব থেকে কিশােরকাল কেটেছে হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়ায়। লেখকের পরিবারের আদি নিবাস অখণ্ড বাংলার । ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের রাজানগর গ্রামে। অবিন্যস্ত জীবনে ঘনশ্যাম চৌধুরীর পড়াশােনা গুপ্তিপাড়ার মীরডাঙা প্রাইমারি স্কুল, গুপ্তিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, পরে উত্তর কলকাতার সারদাচরণ এরিয়ান ইনস্টিটিউশন এবং তারও পরে বর্ধমান জেলার পূর্ব সাতগাছিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পারিবারিক কারণেই তার পড়াশােনার মাঝে মাঝে ছেদ ঘটে ও স্কুল বদল করতে হয়। পড়াশােনা চলাকালীনই চলতে থাকে জীবনসংগ্রাম। কলকাতায় বিদ্যাসাগর সান্ধ্য কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পড়াশােনা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রজীবন থেকেই গল্প-উপন্যাস লেখার পাশাপাশি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন। এম এ পাশ করার পর লেখক একটি বিশিষ্ট বাংলা দৈনিকে সাংবাদিকতার কাজে যুক্ত হন। তখন থেকেই তার জীবনপ্রবাহ অন্যদিকে মােড় নেয়। এরপর শুধুই বড়দের নয়, শিশু-কিশােরদের জন্যও লিখতে শুরু করেন ঘনশ্যাম চৌধুরী। গােয়েন্দা রহস্য কাহিনি ছাড়াও তিনি কল্পবিজ্ঞানের গল্প, রূপকথার গল্প লিখে সমসময়ের সাহিত্যে অন্য স্বাদ নিয়ে আসতে পেরেছেন। তাঁর রাজনৈতিক উপন্যাস ‘অবগাহন’ মল্লভূম পুরস্কার পায়। পুণ্যিবালা গল্প সংকলনের ‘পুণ্যিবালা’ গল্প অবলম্বনে বেতার নাটক। আকাশবাণীর সর্বভারতীয় প্রথম পুরস্কার পায় ২০০৪ সালে। বাংলাদেশের ঢাকা থেকেও তার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা ছােটদের বই রূপকথার ঝাপি, সােনারঙের দিন, আনন্দ রূপকথা। অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কয়লাখনি অঞ্চলের জীবন নিয়ে তার দু’টি গল্প সংকলনে ব্রাত্য মানুষজনের। প্রতি লেখকের অকৃত্রিম দরদ উপলব্ধি করা যায়।