ভূমিকা ‘বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস-’এর এটি পঞ্চম সংস্করণ। এ-লেখার পরিকল্পনা ছিল, উৎসুক সাধারণ পাঠকদের জন্য বাংলা সাহিত্য-বিকাশের একটি জীবন-ভিত্তিক মোটা খসড়া গড়ে দেওয়া। খুঁটিনাটি খবরের ভার এড়িয়ে সাহিত্যের উন্মোচনের ছকটি যাতে প্রথম জিজ্ঞাসু মনের কাছে স্পষ্ট হতে পারে। বাংলা ভাষার সাহিত্য রচনার সূচনা-সময় থেকে রবীন্দ্রযুগের পরিসমাপ্তি, তথা পঞ্চাশের দশকের পূর্ব পর্যন্ত, কালের পরিসরে সাহিত্যের ধারাপ্রবাহের রূপরেখায়িত একটি ছবি !
ইতিহাস একান্তভাবেই তথ্যভিত্তিক। তবু সকল তথ্য নিঃশেষে জড়ো করে দিলেই ইতিহাস গড়ে ওঠে না। দেশ-কাল-মানুষের যোগাযোগে জীবন বিচিত্ররূপ ধরে। এক দেশ- কাল-পাত্রের মেলবন্ধনের সঙ্গে আরো একটি জীবন-চরিত্রের যে তফাত, তার মূলে রয়েছে উৎস-গত বিভিন্নতা। এক দেশে, এক বিশেষিত সময়সীমায় এক বিশেষ জনগোষ্ঠীর হয়ে ওঠার ধরন নিয়েই জীবনের গড়ন। আর সেই গঠনের আনুপূর্বিক রূপায়ণের দিশারি প্রেরণা ধরতেই ইতিহাস। সাহিত্য আর জীবন অভিন্ন নয়। সাহিত্য আসলে জীবন-সম্ভব। জীবনের ওঠাপড়ার টানাপোড়েনে মানুষের আকাঙ্ক্ষার রূপ বদল হয় ; জীবনের অভিজ্ঞতার বিবর্তন বারে বারে নূতনতর বাসনা ও প্রত্যাশার উদ্রেক করে। সাহিত্যের শিল্পী সেই বিবর্তনশীল বাসনা-প্রত্যাশার রূপ গড়তেই রচনাকর্মে নিয়োজিত হন। এদিক থেকে সাহিত্য এক বিশেষ দেশ-কালবদ্ধ বিশেষ মানব-গোষ্ঠীর বিবর্তমান জীবন-অভিজ্ঞতা ও জীবন-বাসনা-প্রত্যাশারই মন্থক অভিব্যক্তি। সাহিত্যের ইতিহাস সেই অভিব্যক্তির ধারাপাত। একটা নির্দিষ্ট সময় সীমায়, আনুমানিক খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের মধ্যসীমা থেকে বিশ শতকের মোটামুটি মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের অভিব্যক্তির ধারাপাত-এর একটি চুম্বকই কেবল ধরা আছে এ বই-এর দুই মলাটের মাঝখানে।