একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান ও ভারতীয় চিন্তাধারা আজকাল শিক্ষিতমহলে ভারী একটা আস্ফালন শোনা যায়। অনেককেই বলতে শুনেছি “আমরা আগামী একবিংশ শতাব্দীর উন্নত বিজ্ঞানকে কুক্ষিগত করবো এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে অঙ্গীভূত করবো, মহাকাশে এবং মহাসমুদ্রে সফল অভিযান চালাবো, সূর্যরশ্মি এবং সাগর থেকে বিদ্যুৎ আহরণ করে শক্তির সমূহ চাহিদা মেটাবো, কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব আনাতে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত করবো, দুরারোগ্য ব্যাধিসমূহকে তাড়িয়ে দেবো এবং সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেবো উন্নত চিকিৎসাবিজ্ঞান, ইত্যাদি, ইত্যাদি। হ্যাঁ, একবিংশ শতাব্দী—যাকে নাকি পুরোপুরি বিজ্ঞানভিত্তিক—তথা কম্প্যুটার প্রযুক্তিমূলক সভ্যতারূপে কল্পনা করা হয়েছে, তাকে স্বাগত জানাতে আগ্রহী হওয়া সময়োচিত সার্থক প্রয়াস। গর্বেরও বিষয়। তবু একটা সন্দেহ থেকে যায়। যে যুগে মানুষ মানুষের স্থলাভিষিক্ত করবে জরা ব্যাধিহীন এবং ইচ্ছামৃত্যুর অধীন যন্ত্রমানবকে সেই যুগের দ্বারদেশে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানে উচ্চ ডিগ্রি গ্রহণ করলে, দেশে উন্নত প্রযুক্তির আমদানি করলে এবং বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলে কি বিজ্ঞানে উন্নতি আসবে--যদি না নিজের মনটাকে আগে বিজ্ঞানমুখী না করি।
Sudhangshu Patra জন্ম ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট পূর্ব মেদিনীপুরের তেঘরী গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম। বাল্যে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস এবং পঞ্চাশের মন্বন্তর সর্বহারা করে। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল অনুরাগ থাকায় প্রচণ্ড কৃচ্ছ্বসাধনের মাধ্যমে লেখাপড়া চালাতে হয়। বিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পর প্রথমে সীপুর ও পরে কালিন্দী ইউনিয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতাকালে বি.এড এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি গ্রহণ করেন। শেষোক্ত বিদ্যালয়ে তাঁর কর্মজীবনের অবসান ঘটেছে। লেখা বই-এর সংখ্যা ৫০-এর বেশি। বিজ্ঞানের দুরূহ তত্ত্বগুলোকে সাধারণের উপযোগী করে পরিবেশন করার ক্ষমতা অসাধারণ। কৃতিত্ব দেখিয়েছেন শুদ্ধ বিজ্ঞান অবলম্বনে গল্প ও ছড়া রচনার ক্ষেত্রেও। স্বৰ্গত রবীন বল বলতেন “শ্রী পাত্রের লেখা গল্পগুলো বড়ো আবেদনপূর্ণ। এমন দরদী ও মরমী মন একালে বিরল।” লেখকের ৯ খণ্ডে কিশোর জ্ঞানকোষ, ৭ খণ্ডে ৬০০ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কাহিনী এবং পশুপাখি-সংক্রান্ত অজস্র গল্প ও প্রবন্ধ ছোটোদের কাছে ভারি আকর্ষণীয়। বহু প্রকাশক পরিবেশ ও ভৌগোলিক আবিষ্কার সংক্রান্ত প্রবন্ধ এবং কিছু কিছু গল্পকে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকেরও অন্তর্ভুক্ত করেছেন (সাহিত্য ও দ্রুতপঠনে)।