ভূমিকা প্রশ্নভরা মন, বেদনাভরা হৃদয় আর বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে এই জীবনের মাঝখানে কেউ কেউ এসে দাঁড়ান। প্রতিরোধ আর মৃত্যু দিয়ে ঘেরা এই জীবন সৌন্দর্যেরই সঙ্গে জড়ানো। সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁরা বিক্ষত হন, আবার নন্দিতও হন। কিংবা বলা যায়, বিক্ষত হতে হতেই নন্দিত হন তাঁরা। তাঁরা প্রশ্ন করতে করতে পথ চলেন, আমরাও চলতে থাকি সঙ্গে। কিন্তু চলি কি সবসময়ে? তাঁরা দেখেন, আর দেখান। আমরা দেখি কি সবসময়ে? আহত হন তাঁরা। জীবনের মধ্যে আরেকটা জীবনের, মৃত্যুর মধ্যে আরেকটা মৃত্যুর রূপ জাগিয়ে তোলেন তাঁরা, অন্তত তুলতে চান। আমরাও কি কখনো জানতে চাই, জানতে পাই, সেই রূপ? ভিতরের কোনো কষ্টের বোধ যদি না থাকে, কীভাবেই-বা জানব তবে! কীভাবেই-বা জানব, ‘এই যে আকুল অশ্রু যুগে-যুগে করে পরিশ্রম', কীভাবে তার থেকে তৈরি হয়ে ওঠে শিল্প, তৈরি হয়ে ওঠে কবিতা গল্প নাটক। জীবনানন্দ বিষ্ণু দে শক্তি প্রণবেন্দুর কবিতা, সন্দীপনের গল্প, শম্ভু মিত্রের নাটক কিংবা বুদ্ধদেবের সাহিত্যধর্ম : এইসব নিয়ে লেখা কয়েকটি প্রবন্ধের মধ্যে, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, সেই ‘পরিশ্রম’টিকে দেখতে হয়েছিল কখনো কখনো। দেখতে হয়েছিল, ভিন্ন ভিন্ন স্বরে, নিজের নিজের বোধিতে কীভাবে এঁরা বলতে চান ‘জীবন-মৃত্যুর শব্দ শুনি'। কীভাবে এঁরা, এই শহরের ভিড়ের মধ্যেই জাগিয়ে দিতে চান খোলা একটা ধূসর প্রান্তর, আর সেখানে পৌঁছবার জন্য ডাক দেন আমাদের। আমরা সাড়া দিতে চাই পাঠক হিসেবে। কিন্তু দিই কি সবসময়ে? এ-বইয়ের শেষ লেখাটিকে বলা যায় সেই প্রান্তরের দিকে এগোতে চাইবার প্রথম অনিশ্চিত পদক্ষেপ।‘পূর্বাশা’ পত্রিকার স্মৃতি নিয়ে এই লেখা, আমাদের মতো কোনো কোনো পাঠকের সাহিত্যপাঠের নেশা তৈরি হয়েছিল একদিন যে-পত্রিকার আশ্রয়ে।
জন্ম ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২। তিনি একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক। তিনি একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনাও করেছেন। বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ খ্রিঃ লাভ করেন ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান ,জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, এ আমির আবরণ, উর্বশীর হাসি, ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি। শঙ্খ ঘোষ ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় কলা বিভাগে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে অবসর নেন। ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে আইওয়া রাইটার্স ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়,শিমলাতে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ আডভান্স স্টাডিজ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেকগুলো অনেকগুলো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।