দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পাঠান রাজত্বের শেষ সেরশাহ অসীম প্রতিভাবলে যে দুর্দান্ত পাঠান আমীরগণকে মন্ত্রৌষধি-রুদ্ধবীর্য সর্পের মত বশীভূত রাখিয়াছিলেন, তাঁহার নির্জীব বংশধরদিগের মধ্যে অন্য কেহ তাহা পারেন নাই। তৎপুত্র ইসলাম শাহের আট বৎসর ব্যাপী রাজত্বকাল এক প্রকার এই আফগানগণের বিদ্রোহ দমন করিতেই অতিবাহিত হইয়াছিল। সেরশাহের মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে সুলেমান খাঁ কররাণী মগধের ও মহম্মদ খাঁ সুর বঙ্গের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন (১৫৪৫)। তাঁহারা তত্তৎপ্রদেশে একপ্রকার স্বাধীনভাবেই ক্ষমতা বিস্তার করিতেছিলেন। লোদী, কররানী, ও সুর প্রভৃতি বংশীয়গণ আফগানদিগেরই বিভিন্ন শাখা। এজন্য সুর- বংশীয়দিগের রাজত্বকালে কররানীগণ রাজসরকারে বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করেন। অবশ্য গুণ না থাকিলে কেহই কৃতী হয় না। জামাল খাঁ কররাণীর চারি পুত্রই কৃতী হইয়াছিলেন ; তন্মধ্যে তাজ খাঁ আফগানদিগের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিদ্বান এবং কর্মদক্ষ ছিলেন। মধ্যম সুলেমান খাঁ মগধের শাসনকর্তা এবং অন্য দুই ভ্রাতা ইমাদ্ ও ইলিয়াস্ খাঁ গঙ্গাতীরবর্তী কয়েকটি পরগণার ইক্তাদার ছিলেন। ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর (১৫৫৪), তৎপুত্র ফিরোজকে নৃশংসরূপে হত্যা করিয়া সের শাহের এক ভ্রাতুষ্পুত্র মহম্মদ শাহ আদিল বা আদিল শাহ নামে সিংহাসন লাভ করেন। কিন্তু লোকে তাঁহাকে আদিল না বলিয়া ‘আদেলি' (বা মূর্খ) এবং আন্ধালি (বা অন্ধ) বলিয়া ব্যক্ত করিত, কারণ তিনি যেমন অকর্মণ্য ছিলেন, তেমনি দুর্বৃত্ত ব্যবহারে আমীরগণকে উত্ত্যক্ত করিয়া তুলিয়াছিলেন। বিশেষত হিমু বা হেমচন্দ্র নামক একজন নীচজাতীয় বিকৃতমূর্তি হিন্দু দোকানদারের উপর রাজ্যপালন বিষয়ে সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া, তিনি সকলেরই মর্মে আঘাত করিয়াছিলেন।