১৩ এপ্রিল ১৯১৯। অমৃতসর। পাঞ্জাব। বৈশাখী উৎসবের দিন সকাল ৯টায় জেনারেল রেজিন্যাল্ড ডায়ার ঘোষণা করলেন শহরে ঢোকা-বেরোনোর জন্য পাস সিস্টেমের কথা। ওই দিনই রাত ৮টা থেকে শহরে কার্ফিউ জারি হওয়ার কথা। অমৃতসরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মিলিটারি কম্যান্ডার জেনারেল ডায়ারের কাছে ১২.৪০-এ খবর এল জালিয়ানওয়ালাবাগে সমাবেশের গোপন পরিকল্পনার কথা । দুপুর থেকেই হাজারে হাজারে শিখ, মুসলমান ও হিন্দুরা সমবেত হতে লাগল জালিয়ানওয়ালাবাগে। অচিরেই ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের বিশাল জমায়েত পূর্ণ করে ফেলল সেই উদ্যানকে। ৪.৩০-এ সভা শুরু হল। এর এক ঘণ্টা পর ৫.৩০-এ ৬৫ জন গোর্খা এবং ২৫ জন বালুচ ও পাঠান সৈন্য নিয়ে অকুস্থলে উপস্থিত হলেন ডায়ার। এদের মধ্যে ৫০ জনের কাছে ছিল .৩০৩ লি-এনফিল্ড বোল্ট-অ্যাকশন রাইফেল, ৪০ জনের কাছে কুখরি। মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রসহ দুটি সাঁজোয়া গাড়িও এনে রাখা হয়েছিল। সমবেত জনতাকে সাবধান না করেই ডায়ার উদ্যানের মূল প্রবেশপথগুলি বন্ধ করে দেন। তারপর সৈন্যদের নির্দেশ দেন গুলি চালাতে। ব্রিটিশ প্রভুর অনুগত দেশি সৈনিকরা অবিলম্বে ফায়ারিং শুরু করে। টানা ১০ মিনিট ধরে চলে সেই অগ্নিবর্ষণ। সিজ়ফায়ার তখনই ঘোষণা করা হয়, যখন টোটার সরবরাহ প্রায় ফুরিয়ে এসেছিল। প্রায় ১৬৫০ রাউন্ডের মতো গুলি চলেছিল। গুলিবিদ্ধ হয়ে যেমন মানুষ মরেছিল, তেমনই বেঘোরে অনেকের প্রাণ গিয়েছিল পদপিষ্ট হয়ে। ব্রিটিশদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই গণহত্যায় ৩৭৯ জনের মৃত্যু হয়। জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীন তদন্তে মৃতের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই নারকীয় গণহত্যা ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। ভাইসরয় লর্ড চেম্সফোর্ড এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডকে অনুমোদিত করে অমৃতসর ও অন্যত্র মার্শাল ল লাগু করেন। কিন্তু স্বদেশে ও বিদেশে এই গণহত্যা তীব্র ধিকৃত হয়। ৮ জুলাই ১৯২০ হাউস অব কমনসের বিতর্কে সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ওয়ার উইনস্টন চার্চিলের ঐতিহাসিক বক্তৃতার পর ২৪৭-৩৭ ভোটে ডায়ারের বিরুদ্ধে নিন্দাপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এর এক বছর আগে ১৯১৯ সালের ৩০ মে ভাইসরয় লর্ড চেমসফোর্ডকে লেখা পত্রে রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ প্রদত্ত নাইটহুড উপাধি পরিত্যাগের কথা ঘোষণা করে জানান, ' ... wish to stand, shorn of all special distinctions, by the side of those of my countrymen who, for their so called insignificance, are liable to suffer degradation not fit for human beings.' জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের আনুপূর্বিক ইতিহাস এবং তার ফলশ্রুতি এই গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে কথোপকথনের মাধ্যমে।