"সময় চলিয়া যায়" বইটিতে লেখকের কথা: সময় চলিয়া যায়-এর সংশোধিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হল। আমার পাঠকদের কাছ থেকে প্রায়ই অনুরোধ আসছিল টাইম ম্যানেজমেন্টের ওপর হু লিখুন। টাইম ম্যানেজমেন্ট লাইফ ম্যানেজমেন্টেরই একটি আবশ্যিক শর্ত। একজন মানুষ যে কত কিছু করতে পারেন বহু মানুষ তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। বাবা-মা যখন তাদের বাচ্চাদের আঁকা শেখান, নাচগান শেখান, আবৃত্তি শেখান, হবার ক্যারাটের ক্লাসেও ভর্তি করে দেন তখন অনেকে তাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেন। আমি তা করি না। আমি বলি তারা ঠিকই করছেন। এক দিকে তারা ছেলেমেয়েদের হুমুখী প্রতিভার স্ফুরণ ঘটাচ্ছেন, অন্যদিকে শেখাচ্ছেন শুধু ইস্কুলের পড়া আর টিউশনিই ছাত্রজীবনের মোক্ষ নয়। ছোটবেলা থেকে নানা ধরনের কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে না পারলে বড় হলে শুধু অফিস করেই একজনকে হাবুডুবু খেতে হবে। বিভিন্ন অর্থপূর্ণ কাজের মধ্যে নিজেকে ভাগ করে দেওয়া মানে সময়কে বিভিন্নভাবে কবহার করতে শেখা। কাজের সময় কাজ, খেলার সময় খেলা- এই সাধারণ নীতি ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস করতে হয়। ঘড়ি ধরে জীবনযাপন করতে বলছি না—কিন্তু আপনার জীবনযাপনকে ঘড়ির অনুবর্তী করে তুলুন সময় ও কাজ দুটোই সমান্তরালভাবে লুক। শুধু খেলা অথবা শুধু পড়া দুটোই ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের পক্ষে খারাপ। টাইম ব্যানেজমেন্টের ওপর ইংরাজিতে যেসব বই আছে তার কিছু কিছু আমি পড়েছি। সেইসব ইয়ের কিছু কিছু উপদেশ আমি গ্রহণ করেছি। তবে অধিকাংশই বর্জন করেছি। কারণ তা বাস্তবসম্মত নয়। বইয়ের বেশিরভাগ তথ্য আমার দীর্ঘজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। আমি ব্যস্ত চাকরি করতে করতে উচ্চশিক্ষা নিয়েছি। পিএইচ ডি করেছি, সংগঠন রেছি, পড়িয়েছি। চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছি, অজস্র লিখেছি, নাটক করেছি, সিনেমা-থিয়েটার ও সভা-সমিতিতে নিয়ম করে গিয়েছি, সামাজিক লৌকিকতা রক্ষা করেছি। অজস্র ভ্রমণ রেছি। এত সবকিছুর জন্য দারা-পুত্র-পরিবারকে সময় দিইনি সে অপবাদ কেউ দিতে পরবেন না। আমার অনিদ্রা রোগ নেই। রাত জেগে বেলায় উঠে সময় মেক আপ করিনি। আমি কোনো সেলিব্রিটি নই। আমার কোনো সহকারী নেই। আমি সাধারণ মানুষ। সাধারণ মা ‘অ-সাধারণ কাজ করতে পারে। অ-সাধারণ’ বলতে রুটিনের বাইরে সব না ধ্বনের কাজ। একমাত্র খেলাধুলা ছাড়া জীবনের বহু দিকে আমার আগ্রহ। সব করা যায় শুধু একটু নিয়মনিষ্ঠ ও আন্তরিক হলেই। আমার এবং বহু সফল মানুষের অভিজ্ঞতার নিরিখে সময়কে কাজে লাগানোর কিছু পদ্ধতি এই বইতে লিখলাম। আর একটু সময় দিন। আর একটু মন দিন। সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায় যে জন ন বুঝে তারে ধিক শতাধিক। ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়
ড. পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা গ্রামে। ১৯৫৯ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে তিনি মাত্র ত্রিশ টাকা সম্বল করে কলকাতায় এসে সংবাদপত্র যোগ দেন। সাংবাদিকতার চাকরির সঙ্গে সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চলতে থাকে। তারপর হঠাৎই কমনওয়েলথ সাংবাদিক বৃত্তি পেয়ে ব্রিটেনে চলে যান সংবাদপত্র সম্পর্কে হাতে-কলমে পাঠ নিতে। ১৯৬১ তে দেশে ফিরে এক নাগাড়ে চারটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন ৩৭ বছর ধরে। বেশির ভাগ সময় ছিলেন আনন্দ বাজারে। চার বছর ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৮ সালে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যক্ষ ও ডিনের পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে অবসর নিয়ে এখন সর্বসময়ের লেখক। সারা প্রথিবী ঘুরেছেন বহুবার। বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে পান আন্তর্জাতিক জেফারসন ফেলোশিপ। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ছিলেন বেশ কিছুকাল। বই এর সংখ্যা ৮৮। গল্প উপন্যাস, ভ্রমণ, প্রবন্ধ। এখন বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন জীবনবাদী বই লেখায় আর যুব ও ছাত্রদের মধ্যে মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য তৈরি করেছেন সিপডাভে নামে একটি প্রতিষ্ঠান।