"মাথার উপর যে শূন্যতা তার নাম আকাশ বুকের ভিতর যে শূন্যতা তার নাম দীর্ঘশ্বাস" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: লতিফুল ইসলাম শিবলী একজন গণমানুষের কবি । সহজ সরল ভাষায় গভীর অনুভূতির প্রকাশ তার কবিতায়। সেই কবিতাকে তিনি নিয়ে গেছেন গণমনুষের কাছে । মূলত তার কবিতাগুলােতে সুর দিয়েই সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় গান । তাই শিবলী’র গান হলাে কবির গান । আবার গানগুলাে থেকে সুর সরিয়ে নিলেই সেগুলাে কবিতা। এখানেই তার মৌলিকত্ব কৃতিত্ব এবং সাফল্য। তিনি লেখেন জীবন থেকে, তার বিশ্বাস থেকে, তার বর্নাঢ্য বৈচিত্রময় জীবনের প্রতিবিম্বই তার কবিতা । তাই তার পক্ষেই বলা সম্ভব—কবি নিজেই তাে একটা কবিতা, কবিতা বােঝার আগে কবিকে পড়াে।। বেপরােয়া সাহস, ফ্যাশন, প্যাশন, দ্রোহ, প্রেম আর রক মিউজিক মিলিয়ে ৯০ দশক থেকেই তিনি তারুণ্যের আইকন। অবিরত ভেঙে চলছেন নিয়ম-রীতি আর প্রথা, তাকেই মানায় এমন উদ্ধত আর স্পর্ধিত উচ্চারণ - ‘যুগােপযােগী হওয়া বন্ধু আমার কর্ম নয়। যুগকে বানাব আমার উপযােগী জেনে রেখাে নিশ্চয়। সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে দীর্ঘতম কাব্যগ্রন্থের নাম- মাথার উপর যে শূন্যতা তার নাম আকাশ বুকের ভেতর যে শূন্যতা তার নাম দীর্ঘশ্বাস।
Title
মাথার উপর যে শূন্যতা তার নাম আকাশ বুকের ভিতর যে শূন্যতা তার নাম দীর্ঘশ্বাস
কয়েকটি গানের টাইটেল বললেই শিবলীকে চেনা সহজ, যেমন- 'তুমি আমার প্রথম সকাল', 'হাসতে দেখ গাইতে দেখ', 'আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি', 'জেল থেকে বলছি', 'হাজার বর্ষা রাত', 'পলাশীর প্রান্তর', 'বিবাগী' 'কেউ সুখী নয়' 'প্রিয় আকাশী'। বর্তমানের জনপ্রিয় উপন্যাস- আসমান, দখল, দারবিশ, রাখাল, ফ্রন্টলাইন, ও অন্তিমের লেখক তিনি।ইংরেজি অনুবাদে ব্রিটিশ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত তার নভেল The Seize এখন পাওয়া যাচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত নাম করা বুক স্টোরে। পয়লা বৈশাখের এক কাকডাকা ভোরে জন্ম নিয়েই দেখেন- মুক্তিযুদ্ধ। তখন যুদ্ধ না বুঝলেও নব্বই দশকের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের ভেতর দিয়েই তাঁর বেড়ে ওঠা। ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালেই স্বৈরশাসকের জেল জুলুম আর হুলিয়া মাথায় নিয়ে চলে আসেন নাটোর থেকে ঢাকায় । অভিনয়ের উপর এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স শেষে গ্রুপথিয়েটার নাট্যচক্রের সঙ্গে মঞ্চনাটকে কাজ করতে করতেই ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকেন শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমে।অভিভাবকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একদল গানপাগল তরুণ ব্যান্ড সংগীতের মাধ্যমে বাংলা গানের ধারায় যে-পরিবর্তন এনেছে, শিবলী তাদেরই অন্যতম। যুগযন্ত্রণার ক্ষ্যাপামো মজ্জাগত বলেই প্রথা ভাঙার যুদ্ধে শিবলী হয়ে ওঠেন আপাদমস্তক 'রক'। আধুনিক জীবনযন্ত্রণাগ্রস্ত তারুণ্যের ভাষাকে শিবলী উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত সহজসরল 'রক' এর ভাষায়। আর তাঁর সাফল্য এখানেই । তাই অল্প সময়ের মধ্যেই শিবলী পরিণত হয়েছেন এদেশের ব্যান্ড সংগীতজগতের কিংবদন্তি গীতিকবিতে । শিবলীর লেখা জনপ্রিয় গানের সংখ্যা প্রায় চার'শ। 'কমপ্লিট ম্যান' খ্যাত ঝুঁটিবাঁধা সেঞ্চুরি ফেব্রিকসের দুর্দান্ত সেই মডেল শিবলী ছিলেন নব্বই দশকের ফ্যাশন-আইকন। তিনি একজন সফল নাট্যকার। বিটিভির যুগে তাঁর লেখা প্রথম সাড়া জাগানো নাটক 'তোমার চোখে দেখি'(১৯৯৫)। আরও লিখেছেন- রাজকুমারী (১৯৯৭) সহ প্রচুর টিভি নাটক। নিজের লেখা নাটক 'রাজকুমারী'তে মির্জা গালিব চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় এখনও অনেকের মনে থাকার কথা।শিবলীর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো- ইচ্ছে হলে ছুঁতে পারি তোমার অভিমান (১৯৯৫)। তুমি আমার কষ্টগুলো সবুজ করে দাও না(২০১০)। মাথার উপরে যে শূন্যতা তার নাম আকাশ, বুকের ভেতরে যে শূন্যতা তার নাম দীর্ঘশ্বাস'(২০১৪)। বাংলা একাডেমী প্রকাশ করেছে তাঁর 'বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত আন্দোলন'(১৯৯৭), নামে ব্যান্ড সংগীতের ওপর লিখিত প্রথম এবং একমাত্র গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগ্রন্থ।শিবলী'র কাহিনী সংলাপ চিত্রনাট্যে ও গীতিকবিতায় প্রথম পূর্ণদৈঘ্য চলচ্চিত্র 'পদ্ম পাতার জল'(২০১৫)। নিজের লেখা সুরে কণ্ঠে ও সঙ্গীত পরিচালনায় প্রথম অডিও এ্যালবাম-'নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম' ।শিবলী'র প্রথম এবং বেস্টসেলার উপন্যাস- দারবিশ (২০১৭)। স্বভাবজাত বোহেমিয়ান, ঘুরেছেন এশিয়া ইউরোপ আর আমেরিকা সহ পৃথিবীর পথে প্রান্তরে।। দুই সন্তান- ওমর এবং ওসমানের বাবা তিনি।