"শেষের কবিতা" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ শেষের কবিতা পটভূমিকাহীন গল্প। এই উপন্যাস নায়ক-নায়িকা প্রধান নয়, বক্তব্য প্রধান। রােমান্স প্রেমের মুক্তির দিক। বিবাহ প্রেমের বন্ধন। রােমান্সে কল্পনার আকাশ অসীম ও অনন্ত হয়। বিবাহে কল্পনার পক্ষচ্ছেদ হয়। কেননা তখন মনের দাবিটা নয়, মানিয়ে নেওয়াটাই বড় কথা হয়। পুরুষের মনের গােপন রহস্য, সে রােমান্স ও বিবাহ দু’টিকেই পেতে চায়। নারীকে সে একান্তই নিজের করে নিতে চায়। এটা পুরুষের মনের গােপন রহস্য হলেও এত বড় দুর্জয় দাবি করার ক্ষমতা বা সাহস সকল পুরুষের থাকে না। অমিত রায় সেই অল্পেরই একজন। নিজের ভবিষ্যৎ বিবাহিত জীবনের যে চিত্র সে অঙ্কন করেছে তাতে তার জীবনের দাবিটি সম্পূর্ণরূপে প্রাত্যহিকের গ্লানি মুক্ত। অমিতের স্বপ্ন যত সুন্দর ও সত্য হােক না কেন, ধূলি মাটির সংসারে সে স্বপ্ন রূপ গ্রহণ করতে পারে না, সেটা বােঝা লাবণ্যের মতাে বুদ্ধিমতী মেয়ের মােটেই অসম্ভব নয়। তাই অমিতের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালােবাসা যত প্রবলই হােক না কেন, বিবাহের প্রয়ােজনে আর্টিস্ট অমিতকে নয়, সাংসারিক পুরুষ শােভনলালকেই বরণ করে নিয়েছে সে। অমিতের প্রেমে আছে কল্পনার প্রাচুর্য ও রােমান্সের উন্মাদনা, শােভনলালের প্রেমে আছে ধৈর্যের প্রাচুর্য ও আশ্বাসের আস্তানা। অমিতের ভালােবাসা বেহিসেবি, তাই ভর সহ্য হয় না। শােভনলালের ভালােবাসা নির্ভয়ের বস্তু। লাবণ্য তাই শােভনলালের কাছে। আশ্রয় নিয়েছে। যার কথা অমিতকে বলেছে ‘শেষের কবিতা’য় : যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালােমন্দ মিলায়ে সকলি, এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি। পুরুষের কামনা ও বাসনা একটি নারীকে কেন্দ্র করে পরিতৃপ্ত লাভ করতে পারে কিনা, না এর জন্য দুটি পৃথক নারীর প্রয়ােজন, এই গূঢ় সমস্যা সামাজিক কারণেই লেখকের পক্ষে আর আলােচনা করা সম্ভব ছিল না। ঔপন্যাসিক চরম মুহূর্তে কাব্যের দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে আত্মরক্ষা করেন। কাব্যের সৌন্দর্যে সমস্যার নগ্নমূর্তি চাপা পড়েছে। সাহিত্যে আমরা সমস্যার সমাধান চাই না, চাই সমস্যার সজীব সুন্দর রূপায়ণ। শেষের কবিতা' উপন্যাসের এটি ক্রটি নয়, অলঙ্করণ। অমিত রায় একজন ব্যারিস্টার। তার পিতাও ছিলেন ব্যারিস্টার। পিতা অত্যন্ত ধনী ছিলেন। তিনি যে পরিমাণ সম্পদ রেখে গেছেন তা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যথেষ্ট। অমিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এ পাশ করার পূর্বেই অক্সফোর্ডে ভর্তি হয়েছিল। অমিত বলে, ফ্যাশানটা হলাে মুখােশ, স্টাইলটা হলাে মুখশ্রী। যারা সাহিত্যের ওমরাও দলের, যারা নিজের মন রেখে চলে, স্টাইল তাদেরই; আর যারা আমলা দলের, দশের মন রাখা যাদের ব্যবসা, ফ্যাশান তাদেরই। অমিতের নেশাই হলাে স্টাইলে। কেবল সাহিত্য কাজে নয়, বেশভূষায় ব্যবহারে। ওর চেহারাতেই একটা বিশেষ ছাদ আছে। দেশি কাপড় প্রায়ই পরে। অমিতের দুই বােন সিসি ও লিসি। তারা খুব ফ্যাশান প্রিয়। মেয়েদের প্রতি অমিতের যেমন ঔদাসীন্য নেই, তেমনি বিশেষ কারও প্রতি আসক্তিও দেখা যায় না। মেয়েদের সম্বন্ধে ওর আগ্রহ না থাকলেও উৎসাহ আছে। অমিত পার্টিতে যায়, তাসও খেলে, ইচ্ছে করেই বাজিতে হারে। অতি সহজেই সবার সাথে ভাব করতে পারে। অমিতের বােন সিসি-লিসিরা ওকে বিয়ে করছে না কেন জিজ্ঞেস করে। অমিত বলে, বিয়ের ব্যাপারে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে পাত্রী। সে যেখানে সেখানে হাে হাে করে বেড়ায়। যখন তখন মােটরে চড়িয়ে বন্ধুদের অনাবশ্যক ঘুরিয়ে আনে। সে শিলঙ পাহাড়ে যায়। কারণ সেখানে ওর দলের লােক কেউ যায় না। অমিত সবাইকে বলে, সে শিলঙ যাচ্ছে নির্জনতা ভােগের জন্যে। তার কিছুদিন কাটে পাহাড়ের ঢালুতে দেওদার গাছের ছায়ায় সুনীতি চাটুজ্যের বাংলা ভাষার শব্দতত্ত্ব বই পড়ে। লাবণ্যের পিতা অবনীশ দত্ত পশ্চিমের এক কলেজের অধ্যাপক। ছােটবেলায় লাবণ্যের মা মারা যায়। মাতৃহীন মেয়েকে খুব যত্ন করে মানুষ করেছেন অবনীশ দত্ত। তার সখ ছিল বিদ্যাচর্চা, যা তার মেয়ের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় সঞ্চালন করেছিলেন। পিতা অবনীশ দত্ত এতদূর পর্যন্ত ভেবে রেখেছিলেন, লাবণ্য বিয়ে না করে পাণ্ডিত্যের সঙ্গে চিরদিন গাঁট বাঁধা হয়ে থাকলেও তার কোনাে আপত্তি থাকবে না। তাঁর একটি স্নেহের পাত্র ছিল, নাম শােভনলাল। শােভনলালেরও ছিল পড়ার প্রতি ভীষণ ঝােক। শােভনলাল গরিবের ছেলে, বত্তির টাকা দিয়ে পড়াশুনা করছে। সে ভালাে ছাত্র, ভবিষ্যতে নাম করতে পারবে, আর সেই খ্যাতি গড়ে তােলার প্রধান কারিগরদের তালিকায় অবনীশ দত্তের নাম থাকবে এ ব্যাপারে কোনাে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। এই গর্বে অধ্যাপক অবনীশ দত্ত শােভনলালকে তার বাড়িতে এসে পড়া নিতে ও লাইব্রেরি ব্যবহারে অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। শােভন যখন লাইব্রেরিতে বসে পড়ত তখন লাবণ্যকে দেখে সংকোচে তার মাথা নত হতাে। শােভনলালের পিতা ননীগােপাল এই বিষয়টি ভালাে চোখে দেখেন না। তিনি মনে করেন, অবনীশ নিজের ঘরে পাঠদানের ছুতােয় বিয়ের ছেলেধরা ফাঁদ পেতেছে। এই অভিযােগে একদিন ননীগােপাল এসে অবনীশ দত্তকে খুব শাসিয়ে যান। অভিযােগ প্রমাণ করতে তিনি পেনসিলে আঁকা লাবণ্য লতার এক ছবি উপস্থাপন করেন। ছবিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। শােভনলালের টিনের প্যাটরার ভেতর থেকে, গােলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে তা আচ্ছন্ন ছিল। ননীগােপালের সন্দেহ, এই ছবিটি লাবণ্যের প্রণয়ের দান। পাত্র হিসেবে শােভনলালের দাম ছিল অত্যন্ত বেশি। আর কিছুদিন অপেক্ষা করলে আরাে যে বেশি হবে ননীগােপালের হিসাবি বুদ্ধিতে তা কড়ায় গণ্ডায় মেলানাে ছিল। এত বড় মূল্যবান পাত্রকে অবনীশ দত্ত বিনা মূল্যে দখল করবে এটি ননীগােপাল কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। ননীগােপালের ভৎসনার পর শােভনলালের পক্ষে আর লাবণ্যর বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয় নি। বি.এ পরীক্ষায় সে পেয়েছিল প্রথম স্থান, লাবণ্য তৃতীয়। সেটাতে লাবণ্য খুব দুঃখ পেয়েছিল। এম.এ পরীক্ষাতেও শােভনের সাথে প্রতিযােগিতায় লাবণ্যের হারের নিশ্চিত সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু এখানেই লাবণ্যের জয় হয়। এতে স্বয়ং অবনীশ দত্তই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। একসময় অবনীশ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তখন তার বয়স সাতচল্লিশ। এই দুর্বল বয়সে তার লাইব্রেরির গ্রন্থ ব্যুহ ভেদ করে, পাণ্ডিত্যকে ছাপিয়ে এক বিধবা তার হৃদয়ে প্রবেশ করে। বিয়েতে কারাে তেমন বাধা ছিল না। শুধু লাবণ্যর প্রতি অবনীশের স্নেহই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বুঝেছিলেন, শােভনলালকে তার মেয়ে ভালােবেসেছে। কারণ শােভনের মতাে ছেলেকে না ভালােবাসতে পারাটাই অস্বাভাবিক। একদিন অবনীশ শােভনলালকে চিঠি লিখে আগের মতাে লাইব্রেরিতে এসে পড়াশুনা করার আহ্বান জানান। চিঠি পেয়ে শােভনলাল ভীষণ খুশি হয়। তার মনটা চঞ্চল হয়ে উঠে। সে ভাবে, এমন উৎসাহপূর্ণ চিঠির পেছনে হয়তাে লাবণ্যর প্রচ্ছন্ন সম্মতি আছে। লাইব্রেরিতে আসতে শুরু করল শােভনলাল। ঘরের মধ্য দিয়ে লাইব্রেরিতে যাওয়া আসা করার সময় দৈবাৎ কখনাে অল্প সময়ের জন্য লাবণ্যের সঙ্গে দেখা হতাে। এ সময় শােভনলালের ইচ্ছে হতাে, লাবণ্য তাকে কিছু একটা বলুক, জিজ্ঞাসা করুক। যে প্রবন্ধ লেখার জন্য এই লাইব্রেরি ব্যবহার করছে, সে প্রবন্ধ সম্পর্কে কৌতুহল প্রকাশ করুক। এ ব্যাপারে লাবণ্য আগ্রহ দেখালে শােভন খাতা খুলে লাবণ্যের সাথে আলােচনা করত। শােভনের কতকগুলাে নিজ উদ্ভাবিত বিশেষ মত ছিল, এ ব্যাপারে • লাবণ্যের মতামত তা জানতে পারলে ভীষণ ভালাে লাগত। কিন্তু এ পর্যন্ত শােভনের সাথে লাবণ্যর কোনাে কথাই হয় না। গায়ে পড়ে যে কিছু বলবে এমন সাহস তার ছিলাে না। এর কিছুদিন পর এক দুপুরবেলায় ভেড়ানাে দরজা খুলে লাবণ্য ঘরে প্রবেশ করে। এভাবে প্রবেশ করতে দেখে শােভনের বুক ধড়াস করে কেঁপে ওঠে। শােভন শশব্যস্ত হয়ে উঠে। সে কী করবে তা ভেবে ঠিক করার আগেই লাবণ্য অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলে, আপনি কেন এ বাড়িতে আসেন? এমন প্রশ্ন আশা করে নি শােভন। সে চমকে উঠল, মুখে কোনাে উত্তর এলাে না। এরপর লাবণ্য বলে, আপনি জানেন, এখানে আসা নিয়ে আপনার বাবা কী বলেছেন? আমার অপমান ঘটাতে আপনার সংকোচ হয় না? এবার শােভন সব বুঝতে পারে। সে চো নিচু করে বিনয়ের সাথে বলে, আমাকে মাফ করবেন, আমি এখনই যাচ্ছি।' শােভনলালকে বরমাল্য দিবে বলেই লাবণ্য নিজের অগােচরে অপেক্ষা করে বসেছিল। কিন্তু শােভনলাল তেমন করে ডাক দিল না। এরপর যে সব ঘটনা ঘটল তা সবই লাবণ্যের বিরুদ্ধে গেল। শােভনকে আঘাত দিলেও সে তার চেয়ে বেশি আঘাত পেল শােভনের নীরবতায়। লাবণ্য ভাবলাে, নিজের ক্ষোভে সে পিতার ইচ্ছার প্রতি অবিচার করল। তার মনে হচ্ছিল, বাবা নিজে নিষ্কৃতি পাবেন এই ভেবেই শােভনকে আবার ডেকে এনেছিলেন। পিতার বিয়ের পথ পরিষ্কার করতেই দ্বিতীয়বার শােভনকে ডাকা। কন্যাকে শােভনের সাথে বিয়ে দিলে পিতা সেই বিধবাকে বিয়ে করতে পারবে। ইচ্ছার সঙ্গে স্নেহের দ্বন্দ্বও ঘুচে যাবে। তারপর থেকে লাবণ্য ক্রমাগতই জেদ করে অবনীশের বিয়ের ব্যবস্থা করলাে। অবনীশ তাঁর সঞ্চিত অর্থের বেশির ভাগ লাবণ্যের জন্য আলাদা করে রেখেছিলেন। কিন্তু পিতার দ্বিতীয় বিয়ের পর লাবণ্য বলে বসে, পিতার কোনাে সঞ্চয় সে গ্রহণ করবে না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাধীনভাবে উপার্জন করে চলবে। অবনীশ মর্মাহত হয়ে বললেন, আমি তাে বিয়ে করতে চাই নি লাবণ্য, তুমিই তাে জেদ করে বিয়ে দিইয়েছ। তবে কেন আজ আমাকে তুমি এমন করে ত্যাগ করছ। লাবণ্য বলল, “আমাদের সম্বন্ধ কোনােকালে যাতে ক্ষুন্ন না হয় সেইজন্যেই আমি এই সংকল্প করেছি। তুমি কিছু ভেবাে না বাবা! যে পথে আমি যথা সেই পথে তােমার আশীর্বাদ চিরদিন রেখাে। এরপর লাবণ্যর আয়ের পথ বের হলাে। সুরমাকে পড়ানাের ভার পড়লাে তার পৌছেছে। যুক্তি দিয়ে প্রেমকে বিশ্লেষণ করা, সেটাকে কী আদৌ প্রেম বলে? প্রেমের যে স্বতঃস্ফূর্ত শক্তি তার কোনাে অস্তিত্বই এখানে নেই। কোনাে অসীম স্পর্শ-অনুভূতিভাবনা এ উপন্যাসে শেষ পর্যন্ত আসে নি। যাত্রা শুরু হয়েছিল ঠিকই, তবে কোথায় যেন একটা ধাক্কা খেয়ে ঠিক যার যার অবস্থানে সবাই ফিরে গেছে। তবে হ্যা, শব্দ গাঁথুনির পাণ্ডিত্যে অবশ্যই শ্রদ্ধা জাগে। আশ্চর্য প্রতিভাবান রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভাষাশৈলী দিয়েই অমর করে রেখেছেন ‘শেষের কবিতা’কে। ঠিক উপন্যাসের চরিত্র অমিতের মতােই রবীন্দ্রনাথ তাঁর অসাধারণ শব্দচয়নে আমাদের বাকরুদ্ধ করেছেন। পাঠকের কাছে কোনাে বার্তা পৌছানাে ছাড়াই উপন্যাসের সমাপ্তি। সত্য, প্রেম, যুক্তি, মৌলিক বিশ্বাস ইত্যাদি অসীম চেতনাগুলােকে ভােগ বিলাসের কাছে যুক্তি দিয়ে লেখক পরাজিত করেছেন। অমিতু প্রতিজ্ঞা করে, সে কখনও কেতকীকে ঠকাবে না। কিন্তু এমন সম্পর্ক তাে ফাঁকিতেই দাঁড়িয়ে থাকে। সত্যকে ধামাচাপা দেবার কোনাে জায়গা নেই। প্রেমও তাই, সত্যিকারভাবে প্রেম জাগলে কোনােমতেই তাকে থামানাে যায় না। শেক্সপিয়রের ‘রােমিও জুলিয়েট' যে কারণে অমর হয়ে আছে। শাসন, বারণ, লজ্জা, ভয়, সংস্কার, নিয়ম এগুলােকে অতিক্রম করে যে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাকেই বলে আধুনিক, প্রগতিশীল, বিকশিত মানুষ। তর্কের ঝাঝে, বুদ্ধির ক্ষুরধারে নিজের স্বার্থকে অক্ষুন্ন রাখার নাম প্রেম নয়, আধুনিকতাও নয়। শেষের কবিতা’ ঠিক কী ধরনের উপন্যাস; এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বা গূঢ় তত্ত্ব কী—এসব প্রশ্নের উত্তর নেই বললেই চলে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিটা ছােটগল্পের মধ্য দিয়ে একেকটা আদর্শ তুলে ধরেছেন, কিন্তু এই উপন্যাসে বলা যায় তা হয় নি। কবিতা দিয়েই কাহিনী শেষ বলেই হয়তাে এর নাম ‘শেষের কবিতা'। ড. মােহাম্মদ আখতার হােসেন বিভাগীয় প্রধান, ফোকলাের বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।