গ্রন্থসূচি * ভূমিকা * ভূমিকা : সংস্কৃদ কবিতা ও ‘মেঘদূত’ * অনুবাদকের বক্তব্য * পূর্বমেঘ * উত্তর মেঘ * স্কেচ * চিত্রসূচি * টীকা * পূর্বমেঘ: শ্লোক * উত্তরমেঘ : শ্লোক * চিত্রপ্রসঙ্গ
ভূমিকা ‘মেঘদূত’ সংস্কৃত ভাষার মহাকবি কালিদাসের এক অনুপম সৃষ্ট। এর সংস্কৃত নাম ‘মেঘদূত’ । কাব্যখানি অনেকেই বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন, তার মধ্যে অনুবাদক হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়েছেন বুদ্ধদেব বসু। ‘মেঘদূত’ ‘পূর্বমেঘদ’ ও ‘উত্তরমেঘ’ নামে দুটি পর্বে ভিবক্ত। এর মধ্যে দিয়ে নির্বাসিত যক্ষের বিরহ বেদানার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। ‘মেঘদূত’ কাব্যে যক্ষের রিহ বেদনার মধ্য দিয়ে মহাকবি কালিদাসের রোমান্টিক বেদনার পরিচয় পাওয়া যায় । কালিদাস কোন উপলক্ষে কোন অবস্থায়‘মেঘদূত’ রচনা করেছিলেন, এর পেছনে কোন ব্যক্তিগত বেদনা্ তাঁর ছিল কিনা বা কোনো বিচ্ছেদ,কোনো নির্বাসন, কোনো প্রতিপালক রাজার বিরোধিতা, সে সব আজ আর জানার কোন উপায় নেই। তবে একথা বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না যে , এই কাব্যের কাহিনর সূত্রটি তাঁরু নিজের উদ্ভাবিত, কোনো পুরাণ কাহিনী বা ইতিহাস থেকে আহরণ করা নয়-সমগ্র সংস্কৃত কাব্য সাহিত্যে এ ধরনের মৌলিক রচনা বিরল। কালিদাসের ‘মেঘদূত’ ভুগোল ও প্রাণীলোকে থেকে অজস্র উপাদান আহরণ করেও শেষ পর্যন্ত আমাদের মনে একটি ব্যক্তিগত আবদেন সংক্রমিত করে, সংস্কৃত ভাষায় যতটা সম্ভব ততটাই। তাই নির্বাসিত যক্ষের বেদনা আমাদের প্রগলভ বলে মনে হয় না, উত্তরমেঘের শেষাংশে আমাদের প্রতীতি জন্মে যে যক্ষ সত্যি সত্যি কষ্ট পাচ্ছে।তার রুদ্ধে আমাদের অভিযোগ হলো যক্ষ তার প্রিয়াকে ‘একপত্নী’ বা সাধ্বী বলে ঘোষণা করলেও নিজেকে মুখফুটে কখনো অনন্যমুখী বলছে না (যদি না উ ১১৫-র সে রকম আত্নকরূনাকে যে মাঝে মাঝে প্রশ্রয় দেয়, তার নির্বাসনের দু:খকে কোনো বৃহত্তর অর্থে মণ্ডিত করতে পারে না। কিন্তু তবু অলকায় আসার পর থেকে কাব্যটি যেন ধীরে ধীরে হৃদয়স্পর্শী হয়ে উঠে। আমরা ক্রমশ অনুভব করি যে যক্ষের বিলাপের মধ্যে শুধু অলংকার ও রতি শাস্ত্রের নিয়ম রক্ষা করা হয়নি; কটি অভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটেছে। কালিদাস জয়িনীর প্রাসাদ শিখর থেকে যে আষাঢ়ের মেঘে দেখেছিলেন আমরাও সে মেঘে দেখছি ইতোমধ্যে পরিবর্তমান মানুষের ইতিহাস তাকে স্পর্শ করেনি।কিন্তু সে অবন্তী, সে বিদিশা কোথায়। মেঘদূতের মেঘ প্রতি বছর চির নতুন ,চির পুরাতন হয়ে দেখা দেয়। রবীন্দ্রনাথ বলেন ,‘ মেঘদূত ছাড়া নববর্ষার কাব্য কোনো সাহিত্য কোথাও নাই। ইহাতে বর্ষার সমস্ত অন্তর্বেদনা নিত্যকালের ভাষায় লিখিয়া হইয়া গেছে। প্রকৃতির সাংবৎসরিক মেঘোৎসবের অনির্বচনীয় কবিত্বগাথা মানবের ভাষায় গাঁথা পড়িয়াছে। নববর্ষার দিনে এই বিষয়কর্মের ক্ষুদ্র সংসারকে কে না বলিবে নির্বাসন। প্রভুর অভিশাপেই এখানে আটকা পড়িয়া আছি। মেঘ আসিয়া বাহিরে যাত্রা করিবার জন্য আহবান করে, তাহাই পূর্বমেঘের গান, এবং যাত্রার অবসানে চিরমিলনের জন্য আশ্বাস দেয়, তাহা্ই উত্তরমেঘের সংবাদ।” যক্ষা পয়লা আষাঢ়ে রামগিরিতে দাঁড়িয়ে যে শতাধিক শ্লোক আবৃত্তি করে গেলো হয়তো মেঘের উদ্দেশে, আসলে এটি তার একটি দীর্ঘ স্বগতোক্তি, এই স্বগতোক্তিই হলো কালিদাসের ‘মেঘদূত’। ‘মেঘদূত’ শুধু কালিদাসেরই নয়, সমগ্র সংস্কৃত সাহিকেত্যর এক অমর সৃষ্টি। রহুল আমিন বি, এ অনার্স,এম,এ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কালিদাস ছিলেন ধ্রুপদি সংস্কৃত ভাষার এক বিশিষ্ট কবি ও নাট্যকার। ইংরেজ কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়রের মতো দেখা হয় তাকে সংস্কৃত ভাষার সাহিত্যে।. তার কবিতা ও নাটকে হিন্দু পুরান ও দর্শনের প্রভাব আছে। ... তার মালবিকাগ্নিমিত্রম্ নাটকের নায়ক অগ্নিমিত্র ছিলেন শুঙ্গবংশীয় রাজা, যাঁর শাসনকাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৫-৪৮ অব্দ।