"লোকসংস্কৃতিঃ উত্তরবঙ্গ ও অসম" বইয়ের ভূমিকা: লােকসংস্কৃতি বলতে বুঝি লােকায়ত সমাজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বিংশ শতাব্দীতে লােকসংস্কৃতি এবং লােকসংস্কৃতিবিজ্ঞান স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও ভারতবর্ষের লােকসংস্কৃতি চর্চার সূচনা হয়েছে। ইউরােপীয়দের সূত্র ধরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতীয়তাবাদী চেতনা।রবীন্দ্রনাথ লােকায়ত ঐতিহ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের আহ্বান জানিয়েছেন। পরবর্তীকালে দীনেশচন্দ্র সেন, আশুতােষ ভট্টাচার্য,শংকর সেনগুপ্ত প্রমুখ লােকসংস্কৃতিবিদদের সূত্র ধরে লােকসংস্কৃতির বিভিন্ন পদ্ধতির সমন্বয়ে বিশেষত বাংলার লােকসংস্কৃতি চর্চার বিকাশ ঘটে। অবশ্য একথা উল্লেখযােগ্য যে লােকসংস্কৃতি চর্চার আদিপর্বে ছিল লােকসাহিত্যের সংগ্রহ, তার উৎস নির্ণয় এবং বর্ণনা। পরবর্তীকালে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব আলােচনার সূত্র ধরে লােকসংস্কৃতি চর্চায় অভিনব দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা ঘটে। বিশ শতকের বিভিন্ন পদ্ধতির বিকাশের ফলে লােকসংস্কৃতির ও পদ্ধতিবিদ্যায় নৃ-তাত্ত্বিক, মাক্সীয়, আঙ্গিকগত, জাতীয়তাবাদী ইত্যাদি নানাতর পদ্ধতি প্রয়ােগের মধ্য দিয়ে লােকসংস্কৃতি চর্চার ধারা গতি লাভ করেছে। উত্তরবঙ্গের ভূ-সাংস্কৃতিক; নৃ-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাংলার অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্নতর। এখানে ভারতবর্ষের মূল চারটি ভাষা পরিবারের মানুষেরা বসবাস করেন; তাদের সংস্কৃতি ও ভাষা ভিন্ন ভিন্ন। ফলে সমাজ বিজ্ঞানীরা এই অঞ্চলকে বলেন ভারতবর্ষের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ। তিস্তা, তােষা, মহানন্দা বিধৌত উত্তরবঙ্গ অতি প্রাচীনকাল থেকেই ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সাংস্কৃতিক প্রবাহের দ্বারা পরিপুষ্ট। ফলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক নৈকট্য লােকসংস্কৃতি চর্চার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।