"পাইথন দিয়ে প্রোগ্রামিং শেখা" ভূমিকা: বাংলাদেশের অর্থনীতি তিনটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমটি পোশাকশিল্প, দ্বিতীয়টি কৃষি ও তৃতীয়টি হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের শ্রম। কিন্তু চতুর্থ পিলারটি অনুপস্থিত। সেই পিলারটি হতে পারত তথ্যপ্রযুক্তি। কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনা ও চেষ্টার অভাবে বাংলাদেশ এই খাতে এখনো অনেক অনেক পেছনে। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যে যতই কথা বলুক, যত শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার স্বপ্নই দেখাক, এতে কাজের কাজ কিছু হবে না। তথ্যপ্রযুক্তির মূল বিষয় হচ্ছে প্রোগ্রামিং আর সেটাকে ধরেই আমাদের আগাতে হবে। অনেক দেরিতে হলেও বাংলাদেশের অনেকেই সেটা বুঝতে শুরু করেছে, আর তাই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের নিয়মিত পড়াশোনার বাইরে প্রোগ্রামিং শেখার চেষ্টা করে যাচ্ছে, বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করছে। বিষয়টি আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের যে, বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করে আমার লেখা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ১ম খণ্ড বইটি দিয়ে। বইটিতে সি (C) প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানোর চেষ্টা করেছি। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করার জন্য পাইথন (Python) নামক প্রোগ্রামিং ভাষাটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যেমন পাইথন দিয়ে প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করছে, তেমনি এমআইটি (MIT)–এর মতো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাদের সিলেবাসে পাইথন দিয়ে প্রোগ্রামিং ও কম্পিউটার বিজ্ঞান শেখা শুরু করার কোর্স নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও যেন এদিক থেকে পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস এই বইটি। আমি এর আগে পাইথন নিয়ে ‘পাইথন পরিচিতি’ নামক একটি বই লিখেছি, কিন্তু সেটি আসলে প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করার জন্য নয়, বরং যারা প্রোগ্রামিং পারে কিন্তু পাইথন শিখতে চায়, তাদের জন্য। আর এই বইটি হচ্ছে যাদের প্রোগ্রামিং সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, তাদের জন্য। ষষ্ঠ শ্রেণি ও তার ওপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বইটি পড়ে বুঝতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বইটি রিভিউ করেছেন তাহমিদ রাফি, তানভীরুল ইসলাম, আবু আশরাফ মাসনুন ও মাফিনার খান। তাঁদের রিভিউ আমাকে অনেক সাহায্য করেছে বইটির বিভিন্ন ভুলত্রু টি সংশোধন করতে। তাই তাঁদের কাছে রইল কৃতজ্ঞতা। আর আমার স্ত্রী সিরাজুম মুনিরা পারমিতাও বইটি লেখার সময় অনেক উৎসাহ দিয়েছে। তার প্রোগ্রামিং ভীতি কাটানোর জন্যই বইটা তাড়াতাড়ি শেষ করা, নইলে আলসেমি করে আরো অনেক সময় কাটিয়ে দিতাম। বছর দুয়েক আগে আমার প্রোগ্রামিং গুরু এস এম শাহরিয়ার হোসেনের সঙ্গে যখন আমার দেখা হয়, তখন তিনি আমাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন, “যেকোনো কাজ করার সময়ই মান বজায় রাখতে হবে এবং ভালো করার চেষ্টা করতে হবে। তোমার লেখা বই বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা পড়ে, খুব ভালো কথা। এখন তুমি যদি আরেকটা বই লিখো, তাহলে সেই বইটা যেন আগের বইয়ের চেয়ে আরো ভালো হয়। এরকম যেন মনে না হয় যে, একটা বই লেখা দরকার, কিছু একটা লিখে ফেললাম। কিংবা আর কেউ তো লিখে না, তাই আমি যা খুশি লিখে ফেলি।” তো আমি চেষ্টা করেছি তাঁর উপদেশ মেনে চলতে। আমার হাইস্কুল জীবন কেটেছে ঢাকার এ কে হাই স্কুলে। সেখানে আমার অন্যতম প্রিয় শিক্ষক ছিলেন ইসলাম স্যার (বিজ্ঞান ও গণিত) ও এরশাদ উল্যাহ স্যার (ইংরেজি)। স্কুল জীবনের পরে দুয়েকবার এরশাদ উল্যাহ স্যারের সঙ্গে দেখা হলেও ইসলাম স্যারের সঙ্গে দেখা হয় নি। অনেকবার ভেবেছি যে স্যারদের বাসায় গিয়ে দেখা করবো, কিন্তু ঠিক কী উছিলায় যে যাবো, তা খুঁজে বের করতে পারি না। তাই এই বইটি আমি তাঁদেরকে উৎসর্গ করছি। নিশ্চয়ই এবারে বইটি উপহার দেওয়ার ছুঁতোয় স্যারদের সঙ্গে দেখা করতে পারবো। আশা করি, এ বই লক্ষ লক্ষ বাংলা ভাষাভাষী ছেলেমেয়েকে প্রোগ্রামিংয়ের আনন্দময় জগতের সঙ্গে পরিচিত করাবে। বইটি পড়ে তারা প্রোগ্রামিং শিখতে উৎসাহ পাবে। আর হ্যাঁ, বাংলাদেশের অর্থনীতির যেই চতুর্থ পিলার, সেটি আমাদের ছেলেমেয়েরা একসময় তৈরি করে ফেলবে।
তামিম শাহরিয়ার সুবিন গ্র্যাব আর অ্যান্ড ডি সেন্টার, সিঙ্গাপুর। মে, ২০১৭।
পাইথন দিয়ে প্রোগ্রামিং শেখা বই এর - সূচীপত্র ভূমিকা লেখক পরিচিতি অধ্যায় ১ – প্রোগ্রামিং ও পাইথন প্রোগ্রামিং কী? পাইথন কী? এই বইটি কাদের জন্য? পাইথন ইনস্টল করা অধ্যায় ২ – পাইথন দিয়ে প্রথম প্রোগ্রাম অধ্যায় ৩ – ভ্যারিয়েবল, ডেটা টাইপ ও গাণিতিক অপারেশন অধ্যায় ৪ – কন্ডিশনাল লজিক (Conditional Logic) if স্টেটমেন্ট লিপ ইয়ার (Leap Year) অধ্যায় ৫ – টার্টলের সঙ্গে পরিচয় অধ্যায় ৬ – লুপ– একই কাজ অনেকবার লুপের ভেতর লুপ লিস্টের ওপর লুপ চালানো while লুপ break এবং continue অধ্যায় ৭ – ফাংশন (Function) অধ্যায় ৮ – স্ট্রিং নিয়ে কাজকারবার অধ্যায় ৯ – পাইথনের বিভিন্ন ডেটা স্ট্রাকচার লিস্ট (list) লিস্ট কমপ্রিহেনশনস (list comprehensions) টাপল (Tuple) সেট (set) ডিকশনারি (Dictionary) অধ্যায় ১০ – মজার কিছু প্রোগ্রাম Random নম্বর সংখ্যার খোঁজ মৌলিক সংখ্যা (Prime Number) টার্টল দিয়ে আঁকিবুঁকি ফিবোনাচ্চি সংখ্যা (Fibonacci Number) অধ্যায় ১১ – আরো বেশি প্রোগ্রামিং পরিশিষ্ট উইন্ডোজে পাইথন ইনস্টল করা ইনডেনটেশন কীভাবে করতে হয়
১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর ময়মনসিংহে জন্ম নেওয়া তামিম শাহরিয়ার সুবিন পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় হোমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অতঃপর এ কে উচ্চ বিদ্যালয় ও নটরডেম কলেজে পড়া শেষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনে শেষ করেন। সরকারি কর্মকর্তার ঘরে জন্ম নেওয়া সুবিনের প্রধান আকর্ষণ প্রোগ্রামিংকে ঘিরে। তিনি প্রোগ্রামিং বিষয়ক প্রায় পাঁচশোটি সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে সমাধান করেছেন। নানা ভাষায় কোডিং করতে পারলেও তার পছন্দের প্রোগ্রামিং ভাষা পাইথন। তবে তার শখ লেখালিখি এবং ভ্রমণ। শখ এবং আগ্রহের বস্তুকে এক বিন্দুতে মিলিয়ে সুবিন লিখে ফেলেছেন বেশ কয়েকটি বই। তামিম শাহরিয়ার সুবিন এর বই সমূহ’র বিষয়বস্তু হলো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, যার বেশিরভাগ বাংলা ভাষায় লিখিত। কীভাবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বিষয়ে জড়তা দূর করা যায় সে ভাবনা থেকেই তিনি বাংলায় প্রোগ্রামিং বিষয়ক বই লেখা শুরু করেন। সহজ, সাবলীল ভাষায় লেখা বলে তামিম শাহরিয়ার সুবিন এর বই পাঠকের আত্মস্থ করতে বেগ পেতে হয় না। তামীম শাহরিয়ার সুবিন এর বই সমগ্র এর মাঝে তাই দেখতে পাওয়া যায় প্রোগ্রামিং গাইডলাইন, পাইথন দিয়ে প্রোগ্রামিং ও গণিতের মতো খটমটে বিষয়ের উপস্থিতি। তিনি বাংলাদেশে থাকাকালে মুক্ত সফটওয়্যার লিমিটেড ও দ্বিমিক কম্পিউটিং নামক দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একজন একাডেমিক কাউন্সিলর হিসেবেও নিয়োজিত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি সপরিবারে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন।