মিথের সঙ্গে মানবসভ্যতার ইতিহাসের সম্পর্ক বেশ প্রাচীন। মিথের আখ্যানগুলাের ভিত্তিতেই মানুষের জীবন ও সংস্কৃতি ব্যাখ্যাত হয়েছে বহুদিন ধরে। কিন্তু সপ্তদশ শতকে বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিবাদের উদ্ভবের ফলে মিথের এই ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে। কিন্তু সত্যি কি মিথের আধারে মানবসমাজ-মানসের রূপ অন্বেষণ অকার্যকর হয়ে গেছে ? এই প্রশ্ন নিয়েই মিথ অ্যান্ড মিনিং-এ বিস্তারিত আলােচনা করেছেন কাঠামােবাদী দার্শনিক ক্লদ লেভি-স্ত্রস। ১৯৭৭ সালে বিবিসির ‘আইডিয়াস’ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে। পাঁচটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন লেখক। সেই সাক্ষাৎকারগুলাে এবং পরে লেভি-স্ত্রসের আরও কিছু বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত হয় বইটি। মানবসমাজের বিভিন্ন মৌলিক বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানী এই দার্শনিকের কখনােই মনে হয়নি, মিথের জগতের সঙ্গে বিজ্ঞান-চিন্তার বিচ্ছেদ ঘটেছে; বরং সভ্যতার হারানাে উপাদানগুলােকে বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়ে বিচার করে মানব-মানসের কার্যকারণ সূত্রগুলাে উপলব্ধির এক নতুন সম্ভাবনা উন্মােচিত হয়েছে। কাঠামােবাদী হিসেবে লেভি-স্ত্রস মানব চিন্তা বৈচিত্র্য ও বৈপরীত্যের মধ্যে সাদৃশ্য অনুসন্ধান করেছেন। নৃতাত্ত্বিক গবেষণার সূত্র ধরে তিনি উপলব্ধি করেছেন, মানবজাতির। মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভিন্নতা সত্ত্বেও মানব মস্তিষ্ক সর্বত্র একই ধরনের ক্ষমতার অধিকারী। বৈজ্ঞানিক চিন্তার অপেক্ষাকৃত উৎকর্ষকে মেনে নিয়েও তিনি মিথের মধ্যে বিরাজমান সত্যকে উপেক্ষণীয় মনে করেননি। মিথের সঙ্গে বিজ্ঞান, ইতিহাস, উপন্যাস ও সংগীতের সম্পর্ক নিয়ে। আলােচনায় ক্লদ লেভি-সুসের মিথ অ্যান্ড মিনিং মানুষের সৃজনশীল উদ্যমের এক অনবদ্য বিশ্লেষণী দলিল হয়ে উঠেছে।