"বঙ্কিম রচনা সমগ্র ১ম খন্ড" বইয়ের প্রসঙ্গেঃ বাংলা তথা ভারতীয় রেনেসাঁসের উজ্জ্বল পুরুষ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৯৯৪) জীর্ন স্থবির অচলায়তনিক মূল্যবোধ ও জীবনাদর্শকে অস্বীকার ও অতিক্রম করে বলিষ্ঠ দুর্গম মহান প্রাণচেতনায় সমৃদ্ধ করতে প্রয়াষী হয়েছেন। সাহিত্য সংস্কৃতিকে জীবনের মৌর করোজ্জ্বল মানুষ বঙ্কিমচন্দ্র জ্ঞান সমৃদ্ধ মননশীল প্রজ্ঞাময় সাহিত্য রচনা করেন। জাতি গঠন সমাজনির্মাণ স্বদেশচেতনা এবং মানবিক প্রত্যয় তার সৃজনকে অনন্য অনতিক্রম্য করেছে। উনবিংশ শতাব্দীর পাশ্চাত্য সভ্যতার ক্ষণপ্রভার আকস্মিকতায় প্রায়ন্ধ উদভ্রান্ত বিমূর জাতির সামনে তিনি তুলে ধরেছেন সত্যের যথার্থ আলোকবর্তিকা, নির্দেশ করেছেন চলার ঋতপথ। যাত্রীর মশাল চাই রাত্রির তিমির হানিবারে’ কবির এই ভাবনা অনিবার্য হয়ে উঠেছে উৎকর্ষ প্রসঙ্গে। বঙ্কিমচন্দ্রের ব্যক্তিগত আত্মভিমান, প্রবল স্বজাতিচেনা এবং জাতীয় মর্যাদাবোধ তার সাহিত্য ভাবনা ও জীবনচর্চা মূলে কার্যকর। রমেশচন্দ্র দত্ত যথার্থই বলেছে যে বঙ্কিমচন্দ্র হলেন The greatest man of the nineteenth century. মানবকল্যানের জন্য বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্যরচনায় ব্রতী হয়েছিলেন। জীবনসম্পর্কহীন শিল্পের জন্য তিনি লেখেননি। যদিও তার সাহিত্যে শিল্পত্বের চরম প্রকাশ ঘটেছে। মানুষের জন্যই তার সৃষ্টি অতি তরুণ বয়স থেকেই এই প্রশ্ন তার মনে জাগত—এ জীবন লইয়া কি করিব?লইয়া কি করিতে হয়’ (ধর্মতত্ত্ব)? প্রসঙ্গতই জীবনের প্রকৃত মুখ কোথায় একথাও তিনি ভেবেছেন। আমার মন’? তিনি বলেছেন পরের জন্য আত্মবিসর্জন ভিন্ন পৃথিবীতে স্থায়ী সুখের অন্য কোন মূল্য নাই'। মানুষকে ভালবাসা মানুষের কল্যাণ-বিধান করাই বঙ্কিমচন্দ্রে সারা জীবনের সাধনা। বাঙ্গলার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন-এ বঙ্কিমচন্দ্র যশের জন্য’, টাকার জন্য লিখতে বারণ করেছেন। বলেছেন—“যদি মনে এমন বুঝিতে পারেন যে, লিখিয়া দেশর বা মনুষ্যজাতির কিছু মঙ্গলসাধন করিতে পারেন, অথবা সৌন্দর্য সৃষ্টি করিতে পারেন, তবে অবশ্য লিখিবেন। তিনি আরও জানিয়েছেন—“যাহা অমত্য, ধর্মবিরুদ্ধ ও পরনিন্দা বা পরপীড়ন বা স্বার্থসাধন যাহার উদ্দেশ্য, যে সকল প্রবন্ধ কখনও হিতকর হইতে পারে না, সুতরাং তাহা একেবারে পরিহার্য।সত্যও ধর্মই সাহিত্যের উদ্দেশ্য। অন্য উদ্দ্যেশে লেখনী ধারণ মহাপাপ'। এই আদর্শ বঙ্কিমচন্দ্র চিরদিন পালন করেছেন। তাই বঙ্কিমচন্দ্র আজও প্রাসঙ্গিক, আজও অনিবার্য। | বঙ্কিমচন্দ্র বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক, ভারতবর্ষেও তার তুল্য প্রতিভাবান সাহিত্যস্রষ্টা আবির্ভূত হয়নি বলেই আমাদের বিশ্বাস। তিনি বাংলা উপন্যাসের প্রথম সম্রাট। প্রচলিত মতানুযায়ী রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয় স্থানে আছে, শরৎচন্দ্র তৃতীয় এবং তারপর আছেন তারাশংকর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য বর্তমান প্রতিবেদকের মতে রবীন্দ্রনাথ সর্বশ্রেষ্ট কবি এবং সঙ্গীতপ্রতিভা হলেও ঔপন্যাসিক রূপে তার অবস্থান খুব উচ্চে নয়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি সভ্যতা ও জীবনাদর্শের সমন্বয় ঘটেছে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে। রেনেসাঁসের মধ্যে একদিকে আছে centrifugal fence বা কেন্দ্রাতিক বা বহির্মুখী প্রথার বা খণ্ডিত ক্ষুদ্ৰপরিসর জীবনের অচলায়তনের সীমা-সংস্কৃতিকে অতিক্রম করে অনন্তচেনায় প্রসারিত হয় ; আর একদিকে আছে centripetal fence বা কেন্দ্রাভিগ বা অন্তর্মুখী ভাবনা বা অস্থির উন্মথিত উৎকেন্দ্রিক ভাবনাকে সংহত সংযত কেন্দ্রনিষ্ঠ করে তোলে। বঙ্কিমে এই দুয়ের সমন্বয় ঘটেছে, যে জন্যই তার উপন্যাসাদি পেয়েছে পরিপূর্ণতা সামগ্রিকতা। চরিত্রচিত্ৰনের বিস্ময় সমাজবোধের আন্তরিকতা, স্বদেশানুরাগের প্রখরতা, জীবনদর্শনের গভীরতা ও মানবতার মহিমায় বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস বিকশিত এবং শিল্পের সহস্রবর্ণী দীপ্তিতে তারা উদ্ভাসিত। জ্ঞানাজনী বৃত্তি ও চিররজনী বৃত্তির শৈল্পিক সাযুজ্যকরণ ঘটেছে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে। তার চোদ্দটি উপন্যসে বঙ্কিমচন্দ্রের সৃজনক্ষমতার বিস্ময়কর পরিচয় বহন করে। | বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫) ইতিহাসের পটভূমিকায় জীবনের বিচিত্র বর্ণময় ঘাত-প্রতিঘাত সঙ্কুল চিত্র। কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬) আলোছায়াময় রহস্যনিবিড় রোমান্স রঙীন জীবনকথা যাতে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভা প্রদীপ্ত অনলশিখায় জ্বলে উঠেছে। বিষবৃক্ষ (১৮৭৩) এবং ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’(১৮৭৮) উপন্যাস দুটির মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র পূর্ণ সামাজিকবোধের প্রকাশ ঘটেছে। প্রবল রূপমুগ্ধতা, হৃদয়বৃত্তির তীব্র উৎসারণ ও দাম্পত্যসম্পর্কবিহীন অবৈধপ্রায় প্রেমের প্রাবল্য কিভাবে জীবনকে সর্বনাশ পরিণতির দিকে নিয়ে যায় এই উপন্যাসদ্বয়ে ও দেখানো হয়েছে। বিষবৃক্ষ' উপন্যাসে প্রথম রোমান্সের কলনলোক থেকে বঙ্কিম নেমে এসেছে কঠিন মূর্তিকার ধূলিধূসর পথে এবং প্রত্যক্ষরূঢ় সমাজজীবনের অভিজ্ঞতায় তা আকীর্ণ। এই সমাজ-অস্বীকৃত প্রণয়েরই নির্মম প্রকাশ ঘটেছে কৃষ্ণকান্তের উইল’-এ যে গ্রন্থকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সামাজিক উপন্যাস বলা যেতে পারে। ‘রাজসিংহ’(১৮৮২) এক বিশুদ্ধ ঐতিহাসিক উপন্যাস যার ঘটনা এবং চরিত্রের সবই ইতিহাস নির্ভর। ‘আনন্দমঠ (১৮৮২) বাংলার ছিয়াত্তরের ভয়াবহ মন্বন্তর এবং সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে। এই উপন্যাস সম্বন্ধে ড. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতামত বিশেষ স্মরণীয়। তিনি বলেছেন আনন্দমঠ-এ একটা অবিখ্যাত সন্ন্যাসী-বিদ্রোহের মধ্যে তিনি [বঙ্কিমচন্দ্র] নিজের উদ্দীপ্ত স্বদেশপ্রেম ও জ্বলন্ত বিশ্বাস সঞ্চার করিয়া, তাহাকে একটা বাবপূত, জ্ঞান-গৌরবমণ্ডিত, মহিমান্বিত আদর্শের আকার দান করিয়াছেন, একটা সুদূরপ্রসারী রাষ্ট্রনৈতিক ও ধর্মনৈতিক বিপ্লবের গৌরব দান করিয়াছেন। তার শেষ উপন্যাস সীতারাম’ (১৮৮৭)-এ ইতিহাস প্রেক্ষাপটে থাকলেও এটি ঐতিহাসিক উপন্যাস হয়ে ওঠেনি—এর একদিকে আছে মানবচরিত্রের জটিলতার বিশ্লেষণ, অন্যদিকে ধর্মতত্ত্বের প্রকাশ’ যার ভিত্তি গীতার নিষ্কাম ধর্ম। রজনী’(১৮৭৭) উপন্যাসে আধুনিক জীবনের জটিলতা ও মানবমনের দুঞ্জেয় রহস্য প্রকাশ পেয়েছে। এটি 'ম্ভিবতঃ বাংলার প্রথম মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। চন্দ্রশেখর’ (১৮৭৫) উপন্যাসে ইতিহাস ও জীবনবোধের সার্থক সমন্বয় ঘটেছে, পটভূমিকায় ইতিহাস থাকলেও জীবনের জটিলতা মানবহৃদয়ের অতলস্পর্শী গভীরতা এতে সার্থক শিল্পরূপ পেয়েছে। এভাবেই বঙ্কিমচন্দ্র হয়ে উঠেছেন বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক সাহিত্য সম্রাট। দিলীপ কুমার মিত্র সূচিপত্র: দুর্গেশনন্দিনী ১ কপালকুণ্ডলা ৮৩ মৃণালিনী ১২৯ বিষবৃক্ষ ১৯৭ ইন্দিরা ২৭৭ যুগলাঙ্গুরীয় ৩২৩ চন্দ্রশেখর ৩৩৩ রাধারাণী ৪০৯ রজনী ৪২৩ কৃষ্ণকান্তের উইল ৪৭১ রাজসিংহ ৫৩৯ আনন্দমঠ ৬৪১ দেবী চৌধুরাণী ৭১৩ সীতারাম ৭৯৫
Bankim Chandra Chattapadhyaya- জন্ম হয় বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তারিখ ২৬ জুন, ১৮৩৮ অর্থাৎ ১৩ আষাঢ় ১২৪৫। চট্টোপাধ্যায়দের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রপিতামহ রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সম্পত্তি পেয়ে কাঁঠালপাড়ায় আসেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। রামহরির পৌত্র যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় পুত্র বঙ্কিমচন্দ্র। বঙ্কিমের পূর্বে তাঁর আরও দুই পুত্র জন্মান – শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমের জন্মকালে তিনি সদ্য অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি কালেক্টর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। জন্মের পর ছয় বছর বঙ্কিমচন্দ্র কাঁটালপাড়াতেই অতিবাহিত করেন। পাঁচ বছর বয়সে কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়। শিশু বয়সেই তাঁর অসামান্য মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। বঙ্কিমের কণিষ্ঠ সহোদর পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “শুনিয়াছি বঙ্কিমচন্দ্র একদিনে বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করিয়াছিলেন।” যদিও গ্রামের পাঠশালায় বঙ্কিম কোনওদিনই যান নি। পাঠশালার গুরুমশাই রামপ্রাণ সরকার বাড়িতে তাঁর গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হন। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা থেকে মনে হয় তিনি রামপ্রাণের শিক্ষা থেকে বিশেষ উপকৃত হন নি। তিনি লিখেছেন, “সৌভাগ্যক্রমে আমরা আট দশ মাসে এই মহাত্মার হস্ত হইতে মুক্তিলাভ করিয়া মেদিনীপুর গেলাম।” ১৮৪৪ সালে বঙ্কিমচন্দ্র পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে আনীত হলে, সেখানেই তাঁর প্রকৃত শিক্ষার সূচনা হয়। মেদিনীপুরের ইংরেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনৈক এফ টিডের পরামর্শে যাদবচন্দ্র শিশু বঙ্কিমকে তাঁর স্কুলে ভর্তি করে দেন। এখানেও বঙ্কিম অল্পকালের মধ্যেই নিজ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। পূর্ণচন্দ্রের রচনা থেকে জানা যায়, বার্ষিক পরীক্ষার ফলে সন্তুষ্ট হয়ে টিড সাহেব বঙ্কিমকে ডবল প্রমোশন দিতে উদ্যত হলে যাদবচন্দ্রের হস্তক্ষেপে তিনি নিরস্ত হন। ১৮৪৭ সালে টিড ঢাকায় বদলি হয়ে গেলে সিনক্লেয়ার তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন; তাঁর কাছেও বঙ্কিম প্রায় দেড় বছর ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৮৪৯ সালে বঙ্কিমচন্দ্র পুনরায় কাঁটালপাড়ায় ফিরে আসেন। এইসময় কাঁটালপাড়ার শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের কাছে বঙ্কিম বাংলা ও সংস্কৃতের পাঠ নেন। বঙ্কিমচন্দ্র খুব ভালো আবৃত্তিকারও ছিলেন। সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জন নামক সংবাদপত্রে প্রকাশিত বহু কবিতা তিনি এই বয়সেই কণ্ঠস্থ করে ফেলেন। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর বিরচিত বিদ্যাসুন্দর কাব্য থেকে বিদ্যার রূপবর্ণন ও জয়দেব প্রণীত গীতগোবিন্দম্ কাব্য থেকে ধীরে সমীরে যমুনাতীরে কবিতাদুটি তিনি প্রায়শই আবৃত্তি করতেন। এছাড়াও পণ্ডিত হলধর তর্কচূড়ামণির কাছে এই সময় তিনি মহাভারত শ্রবণ করতেন। হলধরই তাঁকে শিক্ষা দেন - “শ্রীকৃষ্ণ আদর্শ পুরুষ ও আদর্শ চরিত্র”। এই শিক্ষা তাঁর পরবর্তী জীবনে রচিত নানা রচনাতে প্রতিফলিত হয়েছিল। কিছুকাল পরে ১৮৪৯ সালে হুগলি কলেজে ভর্তি হন। এখানে তিনি সাত বছর পড়াশোনা করেন। হুগলি কলেজ পড়াকালীন ১৮৫৩ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বছরেই সংবাদ প্রভাকরে কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কুড়ি টাকা পুরস্কার লাভ করেন। হুগলি কলেজ অধ্যয়নকালেই বঙ্কিমচন্দ্র কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জনে গদ্য-পদ্য রচনা আরম্ভ করেন। পরবর্তীকালে তাঁর বহু রচনা এই দুই কাগজে প্রকাশিত হয়। হুগলি কলেজ ১৮৫৬ সালে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সব বিষয়ে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে তিনি দুই বছরের জন্য কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বছরই তিনি হুগলি কলেজ ছেড়ে আইন পড়বার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৫৭ সালে জানুয়ারী মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রবর্তন করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরের বছর ১৮৫৮ সালে প্রথমবারের মতো বি.এ. পরীক্ষা নেওয়া হয়। মোট দশজন ছাত্র প্রথমবারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উত্তীর্ণ হয়েছিলেন কেবলমাত্র বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু। তার বাবার মতো তিনিও সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টার পদে। সারা জীবন তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যান। স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে দুটি খেতাবে ভূষিত করে - ১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে কম্প্যানিয়ন অফ দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার খেতাব। তবে সরকারি কর্মকর্তা নয় বরং লেখক এবং হিন্দু পুনর্জাগরণের দার্শনিক হিসেবেই তিনি অধিক প্রখ্যাত। শেষ জীবনে তাঁর স্বাস্থ্য বিশেষ ভালো ছিল না। ১৮৯৪ সালের মার্চ মাসে তাঁর বহুমূত্র রোগ বেশ বেড়ে যায়। এই রোগেই অবশেষে তাঁর মৃত্যু হয়, এপ্রিল ৮, ১৮৯৪ (বাংলা ২৬ চৈত্র ১৩০০ সাল)