আমার এই কাজের পেছনে যদি কোনও মূল লক্ষ্য বা মহৎ উদ্দেশ্য থেকে থাকে, তা এক হতে একাধিক। বাংলা ভাষার দুর্দিনের ইতিহাসটি ও তার দুঃসময়ের সকরুণ কাহিনিটিকে সুদিনের প্রাঙ্গণে একবার তুলে ধরা। নচেৎ বাংলা ভাষার ইতিহাসের অবমূল্যায়ন ও অমর্যাদা করা হয়। মনে রাখতে হবে যে কোনও জিনিসের ইতিহাস-ইতিহাসই। সে দুর্দিনের হােক বা সুদিনের হােক, তাতে কিছু আসে যায় না। বিকৃত বা খণ্ডিত ইতিহাস, ইতিহাসই নয়। ইসলামি বাংলা সাহিত্য ব্যতীত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস খণ্ডিত ও বিকৃত ইতিহাস। দ্বিতীয়, দূর অতীতের ইসলামি বাংলা সাহিত্যের অধুনা বিস্মৃতপ্রায় যে বিশাল ধারাটি একদিন বাংলাভাষার মরা গাঙ্গে বান এনেছিল, বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে বিপুল সংখ্যক জনগণের রস-পিপাসা নিবৃত্ত করেছিল, তা আমাদের দূর ভবিষ্যতের প্রজন্মরা একটু-আধটু জানার সুযােগ পাক। সুদূর অতীতে তাঁদের প্রপিতামহরা কিরূপ সাহিত্য রচনা করতেন, কি ভাবে সান্ধ্যআলাে জ্বেলে দিয়ে অর্ধেক রাত্রি পর্যন্ত বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় দলিজ বাড়ি ও বৈঠকখানা বাড়িতে তা শােনার জন্য সাগ্রহে সকলেই একত্রিত হতেন, বাংলা ভাষা-ভাষি ছেলে-মেয়েদের সেটা জানা তাে দরকার। বাংলার পুঁথি সাহিত্য একদিন তামাম বাঙ্গালীকে যেভাবে আনন্দদানে সহ-অবস্থানে মুগ্ধ ও মােহগ্রস্ত করে তুলেছিল, আজও তার কোন তুলনা নাই। সে এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। দিবাবসানে মানুষ পেয়েছিল শান্তি ও স্বস্তি। প্রভাতে পেয়েছিলকর্ম-স্পৃহা।